সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে অর্থাৎ দেহের বিনিময়ে উপার্জন, যাকে বলা হয় ‘দেহব্যবসা’। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এক বইয়ে লিখেছেন- ‘এক মেয়ে তার দেহের বিনিময়ে ভালোবাসা চাইবে না টাকা নিবে তা একান্তই তার সিদ্ধান্ত।’ এ কথায় হয়তো নারীকে খাটো করা হয়েছে বলে ভাবতে পারেন আপনি। কিন্তু সুনীল এর মাধ্যমে নারীর ইচ্ছার প্রকাশকেই বুঝাতে চেয়েছেন। তবে ইচ্ছা-অনিচ্ছা যাই হোক না কেন, কেউই ভালো ভেবে এ কাজে জড়ায় না। কেউ হয়তো বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য এটাকে বেছে নেয়, কাউকে আবার বাধ্য করা হয় এ কাজে জড়াতে। অবশ্য পৃথিবীর অনেক দেশে এ বিষয়ে আইন লগু থাকায় নারীরা এটাকে পেশা হিসেবেও গ্রহণ করে। এবার দেখে নেয়া যাক ‘দেহব্যবসা’ নিয়ে কোন দেশে কেমন বিধিনিষেধ।
যেসব দেশে ‘যৌনপল্লী’ পর্যটকদের মূল আকর্ষণ
ইউরোপের দ্বীপ রাষ্ট্র নেদারল্যান্ডসে দেহব্যবসা বৈধ। অবশ্য শুধু বৈধ বললেও ভুল হবে, এদেশের যৌনপল্লী বিশ্ববিখ্যাতও। ‘রেডলাইট জোন’ দেখতে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসে আমস্টারডামে। নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়ামেও দেহব্যবসা সম্পূর্ণ বৈধ।
নিয়ন্ত্রিত দেহব্যবসা
ফ্রান্স ২০১৪ সালে যে আইন প্রবর্তন করে, সেটা প্রথম চালু হয়েছিল সুইডেনে, ১৯৯৯ সালে। এ কারণে আইনটি ‘সুইডিশ মডেল’ হিসেবে পরিচিত। এ আইনে অবশ্য যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষা করে দালালদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফলে নিষিদ্ধ না হলেও দেশটিতে অনেকটাই নিয়ন্ত্রিতভাবে চলে দেহব্যবসা।
স্বাস্থ্যপরীক্ষা বাধ্যতামূলক
গ্রিস এবং তুরস্কেও দেহব্যবসা পুরোপুরি বৈধ, তবে দেহ ব্যবসার আইন খুবই কঠিন। এই দু’টি দেশেও যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্যবীমা করা বাধ্যতামূলক। এছাড়া যৌনকর্মীরা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান কি না, তা সবসময় তদারকি করা হয়। স্বাস্থ্যকার্ডেই লেখা থাকে স্বাস্থপরীক্ষার সব তথ্য। দেহব্যবসা বৈধ এমন দেশের মধ্যে রয়েছে সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রিয়াও। তবে এ দু’টি দেশে ১৯ বছর বয়স না হলে কেউ দেহব্যবসায় নামতে পারে না। যৌনকর্মীদের যাতে কোনো যৌনরোগ না হয়, কিংবা তাদের মাধ্যমে খদ্দেরদের মাধ্যে যাতে এইডস বা অন্য কোনো রোগ ছড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে যৌনকর্মীদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হয়।
কঠোর আইন
জার্মানি এবং ফ্রান্সেও দেহব্যবসা বৈধ হলেও যৌনকর্মীদের এই ব্যবসা করতে হয় কঠোর আইন মেনে। জার্মানির কিছু শহরে এখনও যৌনকর্মীরা রাস্তায় নেমে খদ্দের ডাকতে পারেন না। রাস্তায় নেমে খদ্দের সংগ্রহ করা সেসব জায়গায় আইনত দ-নীয়। ফ্রান্সেও ২০১৪ সালে এমন একটা আইন হয়েছে, যা মেনে দেহব্যবসা করা খুব কঠিন। সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াও মতো জার্মানি ও ফ্রান্সেও যৌনকর্মীদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হয়।
জোর করে যৌনকর্মী বানানো অপরাধ
ইউরোপের সব দেশেই দেহব্যবসা আইনত বৈধ। তবে আইন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেশভেদে একটু হলেও অন্যরকম। যেমন স্পেন এবং পর্তুগালেও দেহব্যবসা বৈধ। কিন্তু স্পেনে কাউকে জোর করে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনকর্মী বানানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
যৌনপল্লীতে ধীরে চলা মানা
ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ডের যৌনপল্লী বা ‘রেড লাইট জোন’র প্রায় সব আইনই জার্মানির মতো ছিল। তবে সম্প্রতি ব্রিটেনে কিছু বেসরকারি সংস্থার দাবিতে এতে নতুন কিছু বিষয় যোগ করা হয়েছে। ব্রিটেনের ‘রেড লাইট জোন’-এ এখন ধীরে গাড়ি চালানো নিষেধ।
প্রতিবেশী হয়েও আলাদা
নিউজিল্যান্ডে যৌনব্যবসা একেবারেই বৈধ। ২০০৩ সালে আইন করে সব প্রাপ্তবয়স্কের জন্য যৌনব্যবসাকে বৈধ করে দেয় নিউজিল্যান্ড। তবে প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়ার অনেক রাজ্যে এই ব্যবসা এখনো অবৈধ।
যেখানে ভিন্নরূপ
দক্ষিণ অ্যামেরিকার অধিকাংশ দেশেই যৌনব্যবসা বৈধ। তবে কিছু দেশে মাফিয়া এবং মানবপাচার বড় সমস্যা হয়ে ওঠায়, এই ব্যবসার ওপর কড়াকড়ি এবং তদারকি বেড়েছে। দেহব্যবসাকে মাফিয়া চক্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখতে ব্রাজিল এবং মেক্সিকোতে রয়েছে কঠোর আইন। তারপরও দেশ দু’টিতে মাফিয়া চক্রের আধিপত্য।
লুকোনো দেহব্যবসা
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে দেহব্যবসা চলে আড়ালে-আবডালে। রাস্তায় নেমে যৌনকর্মীরা খদ্দের সংগ্রহ করতে পারেন না। কারণ আইনের চোখে সেটি অবৈধ। খদ্দেররা অর্থের বিনিময়ে যৌনক্ষুধা মেটাতে যায় রাতের আঁধারে। যদিও খদ্দের ধরেত যৌনকর্মীরা রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে রাতের বেলায় অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে যৌনপল্লী কমলেও ম্যাসাজ পার্লার এবং আবাসিক হোটেলে প্রায়ই চলে পুলিশি অভিযান। খদ্দেরসহ যৌনকর্মী আটকের খবরও আসে সেখান থেকে। থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্সে দেহব্যবসা চলে অবাধে। তবে দেশ দু’টিতে এই ব্যবসা আইনের চোখে অবৈধ।
আমাদের সময়.কম : ১৬/০৮/২০১৫
0 comments:
Post a Comment
পাঠকের মন্তব্য আবশ্যক