আমেরিকার স্প্রাউট ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি ‘ফ্লিবানসেরিন’ নামের ওষুধকেই বলা হচ্চিল ‘নারীদের ভায়াগ্রা’। কিন্তু তার অনুমোদন দিতে গিয়ে বার বার পিছিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ)। অবশেষে ওষুধটির ছাড়পত্র পেয়েছে এফডিএর।
বিশেষজ্ঞদের মতে ‘হাইপোঅ্যাকটিভ সেক্সুয়াল ডিজায়ার ডিজঅর্ডার (এইচএসডিডি)’ একটি মানসিক রোগ। আর প্রস্তুতকারকরা বলছেন, ফ্লিবানসেরিন সেবনের মাধ্যমে এই রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া যাবে।
স্প্রাইটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিনডি হোয়াইটহেড বলেন, ‘আমারা সতর্কতার সঙ্গে এই কার্যক্রম চালাচ্ছি। আমরা চাই না, আমাদের কোনও গ্রাহক অসন্তুষ্ট হোক।’
স্প্রাউট কোম্পানির দাবি ফ্লিবানসেরিন ওষুধটির মূল উদ্দেশ্য শারীরিক নয়, মানসিক যৌন চাহিদা মেটানো। যেসব নারী মানসিকভাবে যৌন কামুকতার অভাবে ভোগেন তাদের জন্যই এই পিল। তাদের দাবি, কামুকতা শারীরিক নয়, মানসিক ব্যাপার।
স্পাউট আরও জানায়, কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া যে কোনও নারী প্রতি রাতেই এই পিল সেবন করতে পারবেন।
কার্যকারিতা ও নানা ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকায় এর আগে এফডিএ এ পিলটি দু’বার অনুমোদন পায়নি।
সাধারণত জার্মানির বোয়রিংগার ইগোহাই নামে একটি কোম্পানি এই ওষুধটি তৈরি করে থাকে। বৈধতা পাওয়ার পর জার্মান কোম্পানির কাছ থেকেই স্প্রাউট এই ওষুধ আমদানি করবে।
নারী ভায়াগ্রা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছিল। বলা হচ্ছিল পুরুষদের যৌনজীবনের সমস্যা দূর করতে একাধিক ওষুধ থাকলেও নারীর যৌনসমস্যার সমাধানে এমন কোনো ওষুধ এখনো নেই। অবশ্য নেই বললেও ভুল হবে। কারণ বিজ্ঞানীরা এমন ওষুধ তৈরি করলেও যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেই ওষুধের অনুমোদন দিচ্ছে না বলেই অভিযোগ করে আসছেন দেশটির নারী অধিকার কর্মীরা।
উল্লেখ্য, মেনোপজ পূর্ব অবস্থায় থাকা নারীদের লক্ষ্য করে এই ওষুধ বানানো হয়েছে। নির্মাতারা বলছেন, এমনিতে যৌনআকাক্সক্ষা বোধ করেন না এমন নারীরাও এই ওষুধে সন্তোষজনক যৌনজীবনপেতে পারেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা এটা মনে করছে, নারী ভায়াগ্রা কখনই পুরুষদের ভায়াগ্রার মতো ব্যবসাসফল হতে পারবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল এ ওষুধের পক্ষে ইতিবাচক মতামত দিয়েছে। আর ১৭ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) তা অনুমোদন করে।
এর আগে এই ওষুধের সম্ভাব্য শক্তিশালী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো সম্পর্কে সতর্কবাণী প্রচারের শর্ত জুড়ে দিয়েছিল এফডিএ। তখন এফডিএ বলেছিল এ ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থেকে কোনো কোনো সেবনকারী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন কিংবা ক্লান্তিতে ভুগতে পারেন।
উল্লেখ্য, ২০১০ সাল থেকে দুই দফায় ফ্লিবানসেরিন নামের ওষুধটি বাজারে ছাড়ার অনুমোদন আটকে দিয়েছিল এফডিএ।
অবশ্য সমালোচকেরা বলছেন, এই ওষুধ তেমন কার্যকর কিছু নয়। তবে, ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির কিনসলে ইনস্টিটিউটের ডক্টর জুলিয়া হেইমান বলেন, ‘এই সমস্যায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে সামান্য একটু পরিবর্তনও অনেক ভালো সুফল বয়ে আনতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের নারী অধিকার গ্রুপ ‘ইভেন দ্য স্কোর’ এই ওষুধ বাজারে ছাড়ার পক্ষে প্রচার চালিয়ে আসছিল। সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছিল, এফডিএ-এর মতো সংস্থাগুলোও পক্ষপাতদুষ্ট বলেই পুরুষদের যৌনজীবনের সমস্যা দূর করতে একাধিক ওষুধ থাকলেও নারীর যৌন সমস্যার সমাধানে এমন কোনো বাজারে পাওয়া যায় না। আমাদের সময়.কম : ১৯/০৮/২০১৫
0 comments:
Post a Comment
পাঠকের মন্তব্য আবশ্যক