যৌবন ধরে রাখার গোপন কিছু কৌশল ।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখের নীচে বলিরেখা, কানের কাছে পাকা চুল বা মুখের চামড়ায় ভাজ দেখলে অনেকের মন খারাপ হয়ে যায়। চেহারার সৌন্দর্য হারানোর ভয় সবারই আছে। সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য স্বস্থ্যকার জীবনযাপন এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা জরুরী।আজকাল ৩০/৩৫ পার হতে না হতেই ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যায় ও দেহের বিভিন্ন অংশে দেখা দেয় বয়সজনিত সমস্যা। ফলে অল্প বয়সেই অনেকে বেশ বুড়িয়ে যাচ্ছে। এই অল্প বয়সেই বুড়িয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। তাই সতর্ক হওয়া উচিত তরুণ বয়স থেকেই। সতর্কতার সাথে দারুণ কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি করতে পারলে অনেকটা সময় ধরে রাখতে পারবেন যৌবন। বয়স হলেও দেহে ও ত্বকে বয়সের ছাপ পড়বে বেশ দেরিতে।
যৌবন ধরে রাখতে আমরা সবাই চাই৷ কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চেহারায় আসা পরিবর্তনগুলোকে আটকানো তো মুখের কথা নয়৷ তার জন্য প্রয়োজন নিয়ম মেনে কিছু রুটিন ফলো করা৷
১)যৌবন ধরে রাখার মূল মন্ত্রই হল সুস্থ, নির্মেদ শরীর৷ আর এর জন্য হাঁটার কোনও বিকল্প নেই৷ প্রতিদিন অন্তত আধঘণ্টা করে হাঁটুন৷ মোবাইলে গান শুনতে শুনতে হাঁটা নয়, ঘড়ি ধরে একেবারে ব্রিস্ক ওয়াকিং৷ ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে, হার্ট ভালো থাকবে৷ নিয়ন্ত্রণে থাকবে হার্টের রোগ, ডায়াবেটিজ, কোলেস্টেরল, প্রেশারের মতো সমস্যা৷ ফলে আপনাকেও লাগবে ঝরঝরে৷
২) প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তত একটা করে ফল রাখুন৷ তবে রোজ যদি আম, কলা, আনারস, কাঁঠাল খেতে থাকেন, তাহলে ওজন বেড়ে আপনাকে বয়সের থেকে আরও দশবছর বেশি বয়স্ক লাগবে৷ তাছাড়া ফল পুষ্টিগুণেও ভরপুর৷ ফলে থাকা ফাইবার, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরে পুষ্টি যোগায় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আর আপনাকে রাখে তরতাজা৷
৩) দৈনন্দিন ডায়েট থেকে সবুজ শাকসবজি বাদ দিলে কিন্তু চলবে না৷ সবজি খেলে মানসিক উন্নতিসহ শারীরিক উন্নতিও হয়। মানুষ আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।মোটের উপর সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে৷
৪) ওজন কমাতে গিয়ে বা স্রেফ ইচ্ছে করছে না বলে ব্রেকফাস্ট কখনওই বাদ দেবেন না৷ তাহলে কিন্তু শরীরের মেটাবলিজম সিস্টেমের গোলমাল হয়ে বেশি করে খিদে পেতে থাকে৷ আর বারে বারে খেতে খেতে আখেড়ে আমরা নিজের ক্ষতিই ডেকে আনা৷
৫) যৌবন ধরে রাখতে হলে মিষ্টি জাতীয় খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। চকোলেট, পেস্ট্রি, ব্রাউনি, আইসক্রেমর মতো খাবারে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট থাকে যা শরীরে ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল বাড়ায়। তাই এগুলি যতটা সম্ভব কম খান৷ তা বলে ডায়েট থেকে চিনি পুরোপুরি ছেঁটে ফেলবেন না৷ অল্প হলেও নিয়মিত খান৷ তাহলে শরীরের এনার্জি লেভেল ঠিক থাকবে৷ শরীর-মন জুড়ে স্বতস্ফূর্ততার অনুভূতি থাকবে৷
৬) বয়স বাড়ার প্রথম লক্ষণটাই দেখা যায় আমাদের ত্বকে৷ রিংকল্স, চামড়া কুঁচকে যাওয়া, নির্জীব হওয়ার মতো ত্বকের সমস্যাগুলো শুরু হয় ৩৫-এর পর থেকেই৷তাই বয়স তিরিশ হলেই নিয়ম করে ত্বকের যত্ন নিন৷ ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং রোজ করুন নিয়ম করে৷ আর মধ্য তিরিশের পর থেকে ব্যবহার করুন অ্যান্টি এজিং ক্রিম৷ মাসে অন্তত দুবার ফেস ম্যাসাজ করান৷ তবে খুব প্রয়োজন না হলে ফেসিয়াল করবেন না৷ দিনের বেলা সূর্যের আলো যেন সরাসরি ত্বকে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখুন৷ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করার জন্য এসপিএফ ৩০ বা এর বেশি উপাদান সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করা জরুরি।
৭) শরীরের অতিরিক্ত ওজন ঝরিয়ে ফেলুন। অতিরিক্ত ওজন খুব দ্রুত মানুষকে বুড়িয়ে দেয়৷ এমনকী কমিয়ে দেয় আত্মবিশ্বাসও৷ নিয়মিত ব্যায়াম ও খাবার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেললে যৌবন ধরে রাখা সম্ভব৷ তা বলে একেবারে খাওয়া বন্ধ করেল কিন্তু হিতে বিপরীত হবে৷ শরীরের যাবতীয় গ্ল্যামার শেষ হয়ে, আপনার চেহারায় নেমে আসবে অকাল বার্ধক্য৷
৮) সুস্থ দীর্ঘ জীবন পেতে এবং যৌবন ধরে রাখতে সকালে খানিকক্ষণ সূর্যালোকে থাকুন। সূর্যের আলোতে আছে ভিটামিন ‘ডি’ যা হাড়কে মজবুত করে। এবং সঙ্গে মানসিক চাপ ও অবসন্নতাও কমিয়ে দেয়৷
৯) চেষ্টা করুন প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমোতে৷ সঙ্গে হাল্কা ব্যায়ামের অভ্যেস রাখতে পারলে উপকৃত হবেন আপনিই৷
১০) অ্যালকোহল, সিগারেট বা কোনও নেশার দ্রব্য বর্জন করুন৷
১১)এড়িয়ে চলুন স্ট্রেস৷ স্ট্রেসও খুব তাড়াতাড়ি চেহারায় বয়সের ছাপ ফেলে৷
১২) প্রয়োজন আনুন মানসিকতায়৷ বয়স যে আদতে বাড়ছে, এই সত্যিটা মেনে নিন৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে পাল্টান৷ যা আপনার সাধ্যের মধ্যে রয়েছে, তা নিয়েই খুশি থাকার চেষ্টা করুন৷ অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্খাকে জীবন থেকে একেবারে ছঁটে ফেলুন৷ আপনি ভালো থাকবেন, চারপাশের সবাইকে ভালো রাখতে পারবেন৷
যৌবন ধরে রাখার উপায় |
দৈনন্দিন খাবারের তালিকা কিছু মেনু রাখলে চেহারায় যৌবন ধরে রাখা কঠিন নয়। এই খাবারগুলো বয়সের ছাপ ভিতর থেকে প্রতিরোধ করতে পারে। আসুন এমন খাবার সম্পর্কে জেনে নেই।
১. বাদাম: চেহারায় তারুণ্য ধরে রাখতে বাদাম অত্যান্ত কার্যকরী। বাদামে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা ত্বককে মসৃণ করে ভিতর থেকে উজ্জ্বল করে তোলে।
২. টমেটো: টমেটোতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান লাইকোপেন রয়েছে। এটি বিভিন্ন চর্মরোগ প্রতিরোধ করে। ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকেও রক্ষা করতে সাহায্য করে লাইকোপেন।
৩. অলিভ অয়েল: প্রতিদিন রান্নায় ব্যবহার করুন অলিভ অয়েল। এছাড়া দিনে দুইবার এক চামচ অলিভওয়েল দিয়ে ত্বক মালিশ করুন। এটি ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
৪. পালং শাক: ফাইবার, পটাশিয়েম, ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে পালং শাকে। এই শাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেণ্ট পাওয়া যায়। অ্যান্টি অক্সিডেণ্ট দেহের ফ্রি র্যাডিকেল ধ্বংস করে দেয় এবং ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে বাঁধা দেয়।
৫. হলুদ: হলুদে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামমেটরী উপাদান। এই উপাদান হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সাথে সাথে বয়সের ছাপ পড়া রোধে সাহায্য করে থাকে।
৬. ডালিম: দিনের শুরুটা করুন ডালিমের এক গ্লাস রস খেয়ে। ত্বকে বলিরেখা পড়া রোধ করে ডালিমের রস। ডালিমে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ত্বকের নমনীয়তা বজায় রেখে তাকে টানটান রাখে।
৭. ব্রকোলি: তারুণ্যের উজ্জ্বল ত্বকের জন্য ডিটক্সিফিকেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ব্রকোলিতে প্রচুর পরিমাণে ডিটক্সিফিকেশন আছে। ডিটক্সিফিকেশন দেহ থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করে দিয়ে কোষ তাজা রাখে। সপ্তাহে অন্তত দুই বা তিন দিন ব্রকোলি রাখুন খাওয়া উচিৎ।
৮. চকোলেট: প্রতিদিন চকোলেট, কোকো বা এ জাতীয় কিছু খাওয়া উচিৎ। এতে উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির সমস্যা এমনকি ডিমেনশিয়ার মতো অসুখ থেকে দূরে থাকা যায়। দেশে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতেও সাহায্য করে চকোলেট।
এছাড়া আরও কিছু কৌশল যৌবন বা বয়স ধরে রাখতে সহায়তা করে ।
১। মাছের তেল
মাছের তেলে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে, কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ঠিক রাখে, চুলের সুস্থতা বজায় রাখে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ রোধ করে। ফলে দেহে তারুণ্য ভাব বজায় থাকে। তাই সপ্তাহে অন্তত ৩-৪ দিন মাছ রাখুন খাদ্যতালিকায়।
২। চিনিকে না বলুন
ডারমাটোলজিস্টরা মনে করেন, ‘প্রসেসড চিনি’ যা আমরা হরহামেশা খাই তা ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী। কারণ, প্রসেসড চিনি ত্বকের কোলাজেন টিস্যু দুর্বল করে এবং ত্বকের ইলাস্টিসিটি নষ্ট করে দেয়। সুতরাং যৌবন ধরে রাখতে চিনিকে একেবারেই না বলুন।
৩। পরিশ্রম করুন
নিজের তারুণ্য ধরে রাখার জন্য চলাফেরা, হাঁটাহাঁটি, শারীরিক ব্যায়াম যেভাবেই হোক না কেন পরিশ্রম করুন। শারীরিক পরিশ্রম পুরো দেহের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ও দেহে সঠিক উপায়ে অক্সিজেনের সরবরাহ করে। এতে দেহের প্রায় প্রতিটি কোষ সজীব হয় এবং দেহ অনেক সুঠাম হয়। দেহে বার্ধক্য জনিত সমস্যা অনেক কম দেখা দেয়।বয়স ধরে রাখার উপায়! এর ছবি ফলাফল
৪। তিলের তেল
প্রতিদিন সকালে তিলের তেল পুরো দেহের ত্বকে ম্যাসেজ করলে শুধু ত্বকই হাইড্রেট হয় না এর পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালনও বৃদ্ধি পায়। এরপর ভালো করে গোসল করলে ত্বকের মরা কোষ দূর হয় এবং ত্বক থাকে তরুণ অনেকটা সময় ধরে।
৫। গ্রিন টি
চা/কফি কমবেশি সকলেই পান করে থাকেন। কিন্তু যদি তারুণ্য ধরে রাখতে চান তাহলে এর পরিবর্তে পান করা করুন গ্রিন টি। গ্রিন টির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পরিপাকতন্ত্র সুস্থ রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকে বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করে।
৬। মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকুন
মানসিক চাপের কারণে ত্বকে বিশেষ করে মুখের ত্বকে রিংকেল পড়তে দেখা যায়। এছাড়াও চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল মানসিক চাপ। এটি শুধুমাত্র ত্বকেই বয়সের ছাপ ফেলে না, এটি দেহকে বুড়িয়ে ফেলে। এছাড়া এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করার বেশ বড় একটি কারণ। এছাড়া অনেকেই মানসিক চাপে পড়লে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। তাই মানসিক চাপ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন।
যৌবন নষ্ট হওয়ার কিছু কারন |
যৌবন নষ্ট হওয়ার কিছু কারন |