|
www.bdnewstracker.blogspot.com
তালাক একটি ঘৃনীত কাজ। তারপরও এই সম্পর্কে বিধান রয়েছে। এই তালাক সম্পর্কিত কিছু কথা বলতে হয়। দিগন্ত টেলিভিশনে সরলপথ অনুষ্ঠানে তালাক সংক্রান্ত একটি মাস’আলা দিতে গিয়ে আহলে হাদীস প্রতিষ্ঠাকারীদের একজন প্রফেসার কাজী ইব্রাহিম কোরআন বিরোধী একটা মাস’আলা দিলেন এমনকি রাছুল সা. এর সহিহ হাদীসের তোয়াক্কা করলেন না। তিনি বলে দিলেন ওমর রা. যেহেতু বলেছে সেটা তালাক হয়ে গেছে। আপনি কিভাবে ভুলে গেলেন ইসলাম আল্লা এবং রাছুল সা. এর মনোনীত?
এবার আলোচনা করা দরকার ফতোয়া সম্পর্কে। সরাসরি টেলিভিশন প্রশ্ন উত্তর পর্বে অল্প বয়স্ক এক ভাই টেলিফোনের মাধ্যমে প্রশ্ন করলেন আমি রাগ করে ভয় দেখানোর জন্য আমার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে ফেলেছি আমি সেটা মন থেকে বলিনি এবং আমি এর জন্য আল্লার কাছে অনেক ক্ষমা চেয়েছি। তারপরও কি তালাক হয়ে যাবে? আহলে হাদীস প্রতিষ্ঠাকারী প্রফেসার কাজী ইব্রাহিম ভাইটিকে কোন প্রশ্নও করলেন না। তার স্ত্রীর গর্ভে কোন সন্তান আছে কি না? আল্লার কোরআন এবং রাসুলের হাদীস এর তোয়াক্কা না করে হযরত ওমরের বরাদ দিয়ে হাদীস আওরিয়ে উত্তর দিলেন। আপনার তালাক হয়ে গেছে। অথচ আল্লা কোরানে কি বলেছেন সেটা এই বিজ্ঞ পণ্ডিত উল্লেখ করলেন না। তালাক সংক্রান্ত কিছু আয়াত নিন্মে:
৬৫:১# “হে নবী, তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও, তখন তাদেরকে তালাক দিয়ো ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং ইদ্দত গণনা করো। তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করো। তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে বহিস্কার করো না এবং তারাও যেন বের না হয় যদি না তারা কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয়। এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমালংঘন করে, সে নিজেরই অনিষ্ট করে। সে জানে না, হয়তো আল্লাহ এই তালাকের পর কোন নতুন উপায় করে দেবেন।”
৬৫:২# “অতঃপর তারা যখন তাদের ইদ্দতকালে পৌঁছে, তখন তাদেরকে যথোপযুক্ত পন্থায় রেখে দেবে অথবা যথোপযুক্ত পন্থায় ছেড়ে দেবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে দু’জন নির্ভরযোগ্য লোককে সাক্ষী রাখবে। তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দিবে। এতদ্দ্বারা যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন।” ৬৫:৩# “এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।”
৬৫:৪# “তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যাদের ঋতুবর্তী হওয়ার আশা নেই, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি, তাদেরও অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে। গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তানপ্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার কাজ সহজ করে দেন।”
৬৫:৫# “এটা আল্লাহর নির্দেশ, যা তিনি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন। যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পাপ মোচন করেন এবং তাকে মহাপুরস্কার দেন।”
৬৫:৬# “তোমরা তোমাদের সামর্থø অনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর, তাদেরকেও বসবাসের জন্যে সেরূপ গৃহ দাও। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করো না। যদি তারা গর্ভবতী হয়, তবে সন্তানপ্রসব পর্যন্ত তাদের ব্যয়ভার বহন করবে। যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্যদান করে, তবে তাদেরকে প্রাপ্য পারিশ্রমিক দেবে এবং এ সম্পর্কে পরস্পর সংযতভাবে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি পরস্পর জেদ কর, তবে অন্য নারী স্তন্যদান করবে।”
সূরা বাকারার ২:২২৬# “যারা নিজেদের স্ত্রীদের নিকট গমন করবেনা বলে কসম খেয়ে বসে তাদের জন্য চার মাসের অবকাশ রয়েছে অতঃপর যদি পারস্পরিক মিল-মিশ করে নেয়, তবে আল্লাহ ক্ষামাকারী দয়ালু।”
কোরআনে উপরোক্ত তালাক সংক্রান্ত আয়াতগুলি সম্পর্কে প্রফেসার ইব্রাহিম পড়ে নাই সেটা আমি বিশ্বাস করি না। আপনাদেরও বিশ্বাস হবে না। আল্লার রাসুল সা. বলেছেন রাগ অবস্থায় তালাক এবং গোলাম আযাদ গ্রহন যোগ্য নয়। আহলে হাদীস প্রতিষ্ঠাকারী প্রফেসার ইব্রাহিম কিভাবে নবীর উম্মত সেটাই চিন্তার বিষয়। সে তো নিজেই বিজ্ঞ বিধান দাতা। এই বিজ্ঞ পন্ডিত যার অনুসারী তিনি তো তার বিধানই প্রচলন করে যাবেন।
হযরত ওমর নিজে এবং তার পুত্রও একবার তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছিলেন সেটা নিম্নে তিনটি হাদীস বর্ণনা করলেই বুঝতে পারবেন। হাদীস তিনটি কুর’আনুল কারীম এর ৬৫ এবং ১০১৫ নং পৃষ্ঠা থেকে হুবহু উদৃত করছি :
ক) না’ফে থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই ইবনে ওমর (রাযিআল্লাহু আনহুমা) ‘ইলা’ (চার মাস স্ত্রী সংস্পর্শ পরিত্যাগের কসম করা) সম্পর্কে বলেন, যার উল্লেখ আল্লাহ্ কুরআনে করেছেন যে, নিদির্ষ্ট সময় (চার মাস) অতিবাহিত হওয়ার পর আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী হয় তার স্ত্রীকে বৈধ পদ্ধতিতে রাখবে, আর না হয় তালাক দিবে। (বুখারী, হাদীস নং ৫২৯০)
খ) না’ফে, ইবনে ওমর (রাযিআল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন চার মাস অতিবাহিত হয়ে যায়, তখন তালাক দেয়া পর্যন্ত (স্ত্রী) অপেক্ষা করবে। স্বামী তালাক না দেয়া পর্যন্ত তালাক হবে না। উসমান, আলী, আবু দারদা এবং আয়শা (রাযিআল্লাহু আনহুম) সহ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ) আরো বার জন সাহাবী থেকে এমত বর্ণিত হয়েছে। (বুখারী, হাদীস নং ৫২৯১)
গ) আবদুল্লাহ্ ইবনে উমার (রা:) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা:)-এর জীবদ্দশায় তিনি তার ঋতুবতী স্ত্রীকে তালাক দিলে উমর ইবনুল খাত্তাব রাসূলুল্লাহ্ (সা:)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস কররেন। রাসূল (সা:) বললেন: তাকে (তোমার পুত্রকে) বলো সে যেনো তার স্ত্রী ‘রুজু’ করে (ফিরিয়ে নেয়) এবং ‘তুহর’ বা ঋতু থেকে পবিত্র হওয়া পর্যন্ত এবং তারপর ঋতুবতী হয়ে (পুনরায়) পাক না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী হিসেবেই রেখে দেয়। অত:পর ইচ্ছা করলে তাকে রাখবে অন্যথায় যৌন-মিলন না করে তালাক দিবে। এভাবে ইদ্দত পালনের সুযোগ রেখে আল্লাহ্ তা’য়ালা স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে আদেশ করেছেন। বু.খা:- ৫২৫১।
আপনাদের অনেকরই হয়তো জানা আছে নবী করিম সা. তাঁর সব স্ত্রীদের তালাক দিয়ে প্রায় এক মাস ঘর ছাড়া ছিলেন। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না কোন কোন স্ত্রীদের জন্য রাছুল সা. এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিরমিযী ৩২৫৬ নং হাদিসটি পঠনে পরিষ্কার হবে। ‘হে আমীরুল মুমিনীন। নবী করীম (সা:) এর সেই দুজন স্ত্রী কে কে যাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, তোমরা দুজন যদি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে রুজু হও তবে ভালো, কারণ তোমাদের দু’জনের অন্তর ঝুঁকে পড়েছে’ (৬৬:৪)? ওমার (রা:) বলেন, হে ইবনে আব্বাস! আশ্চর্য (তুমি এটুকুও জান না)! যুহরী (র) বলেন, আল্লাহর শপথ! এই কথা জিজ্ঞেস করা তার নিকট অপমন্দ লেগেছে, কিন্তু তিনি তা গোপন করেনি। ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, তিনি আমাকে বললেন, তারা দু’জন আয়েশা ও হাফসা (রা:)।
ইমাম নাসায়ী মুহাম্মদ ইবনে লাবিদের বর্ণনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন:- এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক এক সাথে দিয়েছেন এ সংবাদ রাসুল (ছ:) এর নিকট পৌছালে তিনি রাগান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, তোমরা কি আল্লাহর কিতাবের প্রতি উপহাস করছ? অথচ আমি এখনও তোমাদের মধ্যেই রয়েছি। এ সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো হে আল্লাহর রাসুল! আমি তাকে হত্যা করব। (মাআরেফুল কোরআন ১২৭ পৃষ্ঠা) এ হাদীসটি থেকেও বুঝা যায় এই ভাবে তালাক প্রদান কারী এবং আল্লাহর কিতাব ও রাসুল বিরোধী ফতোয়া দিয়ে তালাক কবুল হওয়ার ফয়সালাকারী উভয়ই হত্যার হকদার। যদি কেউ না ভুলবশত করে থাকে। তবে প্রফেসার ইব্রাহিম এর মত লোকের জন্য ক্ষমা পাওয়া অসম্ভব।
এই সমস্ত হাদীস থাকার পরও যদি এই রকম কোরআন বিরোধী মাস’আলা কেউ দেয় সে কিভাবে মুহাম্মদ সা. এর উম্মত বলার এবং রাসুল সা. সাফায়্যাত পাওয়ার দাবী করতে পারে? এমনকি তার পদাঙ্ক অনুসরনকারী আহলে হাদীস প্রতিষ্ঠাকারীরা কিভাবে সতপথ প্রাপ্ত হবে? এইসব কর্মে দাবীদার পাপীষ্ঠ বান্দাদের জায়গা যে কোথায় সেটা আল্লাই ঠিক করবেন। এবং মানুষের চিন্তা করা দরকার। প্রকৃতপক্ষে এরা সাহাবাদেরই উম্মত। আল্লার ভয় এদের অন্তরে নেই। এই তথাকতিত আলেম সাহেবেরা বলে রাসুল সা. যে কাজ করেন নাই সেটাই বেদাত; তাহলে এসব কর্মগুলি অবশ্যই বেদাৎ।
কাজেই রাগের মাথায় কোন পুরুষ যদি স্ত্রীকে এক সাথে ১.২.৩ তালাক বলেও ফেলে সেটা তালাক হওয়ার কোন কারণ নাই। কোরান এবং রাছুল সা. এর হাদিস অনুযায়ী এক তালাক হিসাবে গন্য হতে পারে না। যদি স্বামী স্ত্রী উভয়েই তা মেনে নেয় তবে সেটা ১তালাক হিসাবে গন্য হবে। যেহেতু রাছুল সা. বলেছেন রাগের মাথায় তালাক দিলে সেটা গ্রহন হবে না। এরপর আর কোন পন্ডিতের কথায় মূল্য দিলে সে রাছুল সা. এর উম্মতে থাকতে পারে না। আমরা মানুষ ভুল আমাদের হবেই। কিন্তু জেনে শুনে আল্লার রাছুল সা. এর বিধানের উপর দিয়ে হাত ঘুরানোকে ভুল মানা যায় না। এটা মহা পাপ। আপনারা উপরোক্ত লেখাটি ভালকরে পড়ে বিবেচনা করে ফায়সালা করবেন। |