ভালোবাসা কোনো কিছু মানে না । সামাজিকতার বিধিনিষেধ পেরিয়ে প্রেমের
সম্পর্ক করার পর হঠাৎ যদি প্রেমের ফোলানো বেলুনটি আলপিনের খোঁচায় চুপসে যায়, তখন কী হবে! সম্পর্কের পরিনতি নিয়ে
ভাবতে হবে । প্রেমের এত সুর আর এত গান পরে যদি ভালো না লাগে তখন কী হবে ? ভালো
লাগা মানে হচ্ছে, রাস্তা থেকে
পছন্দ হলে সেই ফুলটি ছিঁড়ে নেওয়া! শুকিয়ে গেলে বা গন্ধ চলে গেলে তা ছুড়ে ফেলা! আর
ভালোবাসা হচ্ছে ফুলগাছটির পরিচর্যা করা। প্রেম থাকবে সারা জীবন। তাই এর সঠিক
পরিচর্যা করা প্রয়োজন জীবনভর। আজকাল প্রেম করা একেবারে ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পোশাকের ক্ষেত্রে যেমন একটা নতুন ড্রেস ভালো লেগেছে তাই আমরা পোশাকটি কিনে থাকি
আবার তা পুরাতন হয়ে গেলে সেটি ফেলে দিয়ে আবার নতুন একটি কিনি। ভালোবাসার ক্ষেত্রেই
ঠিক একই ঘটনা ঘটছে বর্তমান সময়ে। কিন্তু এভাবে সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়া একেবারে উচিৎ
না। প্রেমের সম্পর্ক করার আগে কিছু বিষয়
আগেই চিন্তা করে নেয়া উচিত এবং ভেবে
চিন্তে সম্পর্কে জড়ানো উচিত।
* প্রেমে যে পড়েছেন তার গন্তব্য কী? ‘টাইম পাস’
না
সারা জীবনের জন্য গাঁটছড়া বাঁধার ইচ্ছা।
* যে সময় দুজন একসঙ্গে কাটালেন, এই সময়ে দুজনার
মতের মিল-অমিল কতখানি মেপে নিন।
* একজনের পছন্দ-অপছন্দ অন্যজনের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা কতখানি।
বুঝে নিন।
* সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরস্পরের পরিবারের সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা
প্রয়োজন।
* পেশাজীবন নিয়ে কে কী ভাবছেন, তা দুজনের কাছে
পরিষ্কার থাকা উচিত।
* প্রেমের মধুর দিনগুলোয় সজাগ থাকাই ভালো। গড্ডলিকায় ভেসে যাওয়া চলবে
না।
*খোঁজখবর নেয়া উচিত তাঁদের স্থায়ী ঠিকানা ও পরিচিত জনেরা কী বলেন
তাঁদের ব্যাপারে স্থায়ী নিবাস
আসলেই আছে কিনা কিংবা সেখানে আত্মীয় বা পাড়া প্রতিবেশীরা তাঁদের সম্পর্কে কী বলেন,
এই
ব্যাপারটি হাস্যকর মনে হলেও ফেলনা নয়। কারণ সেটা জানলে বুঝতে পারবেন পরিবার হিসাবে
তাঁরা কেমন, এবং সমাজের অন্যদের কাছে তাঁদের অবস্থান কী।
* তার পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত ও তার পরিবারের মানুষগুলো কেমন, এটা জেনে নেয়া খুবই জরুরী। কেননা সেই
মানুষগুলো একসময় আপনারও আপনজন হবেন।
*তার কিংবা তার পরিবারের উপার্জনের উৎসগুলো কী কী তিনি আপনার মনের
মানুষ বলেই কোন অপরাধ মূলক বা অনৈতিক কাজের সাথে যুক্ত নন, এটা ভাবাটা বোকামি। কেবল তিনিই নয়, তার মা-বাবা-ভাই-বোন তথা সম্পূর্ণ
পরিবারের পেশা সম্পর্কেই বিস্তারিত জেনে নেয়া খুবই জরুরী।
* আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে বাস্তবতাকে মেনে নিতে মানসিক প্রস্তুতি যেন
থাকে।
* ভুলেও ফাঁদে পড়া চলবে না। সুখের মুহূর্তগুলো ভাগাভাগি করুন। কিন্তু
একান্ত মুহূর্তগুলো দাম্পত্য জীবনের জন্য রাখাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
* ক্ষণিকের আবেগের জোয়ারে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের নানা ছবি সৃষ্টি হয়ে যায়।
কিন্তু ব্ল্যাকমেলিংয়ের শিকার হতে পারেন—এমন আশঙ্কা মনে
রাখতেই হবে।
* ভিডিও বা ফটো ব্ল্যাকমেলিং এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। সাবধানতা
কাম্য। কোনোভাবেই নিরাপদ ও সহজ স্বাভাবিক প্রেম-বন্ধুতার বেশি চাওয়া পাওয়ায় জড়ানো
ঠিক নয়।
* ডেটিংয়ের নামে অচেনা কোনো জায়গা, হোটেল, বন্ধুর বাসা
নিরাপদ নয়।
* জীবন থেকে পলায়ন প্রেম নয়; প্রেমে পড়ে দূরে
কোথাও কোনো হারিয়ে যাওয়া বা পালিয়ে যাওয়া ঠিক নয়।
*সারা জীবনের
জন্য দুর্গতি ও কান্না কি না—প্রেমের পর্বে মনে রাখা চাই।
*পরিবার তাকে পছন্দ করবে কি না ? একজনের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে
পড়ার আগে ভাবুন আপনার পরিবার তাকে পছন্দ করবে কি না। প্রয়োজনে তাকে আপনার বন্ধু
বলে পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। এতে করে আপনার সিদ্ধান্তটি নিতে বেশ সহজ হবে।
*সে আপনাকে পছন্দ করে কি না : শুধু আপনি তাকে পছন্দ করলে চলবে না। সে
আপনাকে পছন্দ করে কি না সে বিষয়েও নিশ্চিত হয়ে তারপরে তাকে প্রপোজ করতে হবে।
একতরফা প্রেমের ক্ষেত্রে প্রপোজ না করাই ভালো।
*এমন হতে পারে যে
প্রেমিক আপনাকে যৌন সম্পর্কে জড়াবার জন্য পীড়াপীড়ি করছেন, হুমকি দিচ্ছেন
আপনি রাজি না হলে সম্পর্ক ভেঙে ফেলবেন, কিংবা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা
করছেন। এক্ষেত্রে প্রথমেই ভেবে দেখুন, বিষয়টি কি আপনি চান? আপনিও কি তার
সাথে যৌন সম্পর্কে জড়াতে চান এখনই? সাথে সাথে এটাও ভাবুন যে আপনার সামাজিক
অবস্থান বা পারিবারিক মূল্যবোধ অনুযায়ী কাজটা কি ঠিক হবে? জীবন আপনার,
সিদ্ধান্ত
নিতে হবে আপনাকেই।
*প্রেমিক মানেই তাঁকে চোখ বুজে ভরসা করতে হবে এমন কোনো আইন নেই। এই
অন্ধ ভরসার কারণে প্রেমিকের সাথে কোনো বন্ধুর বাসায়, হোটেলে বা নির্জন স্থানে চলে যাবেন না যেন। নিজের বিপদ নিজেই ডেকে
আনবেন তাহলে।
*-শুধুমাত্র যৌনতাকে বৈধ করার জন্য গোপনে কাজী অফিসে বিয়ে করার মত
বোকামি করতে যাবেন না একেবারেই।
*প্রেমিককে খুশি করতে নিজের ব্যক্তিগত ছবি দেয়ার শর্তেও রাজি হবেন
না।
* সবচাইতে বড় সত্য হচ্ছে, যৌন সম্পর্কে বাধা দেয়ায় প্রেমিক যদি আপনাকে ছেড়ে চলে যায়, তাহলে তাঁকে যেতে দিন। এটা জানবেন যে
এই মানুষটি কখনোই আপনাকে ভালোবাসেনি। এবং তার থেকে দূরে থাকাই আপনার জন্য ভালো
হবে।
প্রেম ছেলেখেলা বা টাইম পাস নয়। প্রেম হলো একটি পবিত্র সম্ভাবনাময়
সুখের সংসারের ভিত্তি। একটাই জীবন,
ভালো
থাকুন। মনে রাখবেন, একটি ভুল
সিদ্ধান্ত সারা জীবনের অশান্তি ডেকে আনতে পারে।
ইসলামের দৃষ্টিতে প্রেম করা জায়েজ কিনা ?
*“স্বাধীনভাবে
লালসা পূরণ কিংবা গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করবে না” (সূরা আল মায়িদা: ৫) যেখানে দৃষ্টি নীচু ও সংযত রাখা, লজ্জা স্থান হিফাজত করার কথা এবং পর্দা করার কথা বলা হয়েছে আর সূরা
মায়িদাতে গোপন প্রেমলীলাকে নিষেধ করা হয়েছে সেখানে বিবাহ পূর্ব প্রেম বৈধ হতে পারে
কি করে ? এটা হারাম।
*এরপর সূরা নূর এর ৩০ নং আয়াতে পুরুষদের চোখ নীচু রাখতে এবং লজ্জা
স্থান হিফাজত করতে বলা হয়েছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
*"ঈমানদার
নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের
দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ
প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের
সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং
তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ
করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।" (সূরা নুর ৩১ নং আয়াতে )
* সূরা আহযাবের ৩২ ৩৩ ও ৫৯ নং আয়াতে পর্দা করার নির্দেশ আরো পরিস্কার
ভাষায় বলা হয়েছে।
ব্যভিচারের ব্যপারে আল্লাহ আরো বলেন ।
আর ব্যভিচারের
কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (সূরা বনী ইসরাইল ৩২ আয়াতে )
জিনার নিকট যাওয়াই নিষেধ অর্থাৎ যে সকল জিনিস জিনার নিকটবর্তী করে
দেয় তার কাছে যাওয়াই নিষেধ। বিবাহ পূর্ব প্রেম নর-নারীকে জিনার নিকটবর্তী করে
দেয় আর জিনা মারাত্মক একটি কবিরা গুণাহ।
* এবং যারা
আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ
করে, তারা শাস্তির
সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায়
চিরকাল বসবাস করবে। (সূরা ফুরকান ৬৮ ৬৯ আয়াতে )
বিবাহপূর্ব প্রেম অনেক সময় বান্দাহকে শিরকের নিকটবর্তী করে দেয়।
কারণ অনেক সময় তারা একে অপরকে এতটাই ভালবাসা শুরু করে দেয় যে প্রকার ভালবাসা
পাওয়ার দাবীদার একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ বলেন -
*আর কোন লোক এমনও
রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি
ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর
প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের
তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হ’ত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে
নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা
শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর। ( সূরা বাকারা ১৬৫ )
ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে প্রেম তৈরি হবে তখনই যখন তারা দুজনই হিজাব
ভঙ্গ করলে । কোন একজন যদি হিজাব কোনমতেই ভঙ্গ না করে তবে কোন মতেই প্রেম দাঁড়াবে
না । যেসব ছেলে মেয়ের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে তারা হিজাব কোনমতেই ভঙ্গ করে না ।
মনে মনে কাউকে ভাল লাগলেও তারা হিজাব ভঙ্গ করে পথচ্যুত হয় না । হিজাব মানে শুধু
পোশাক নয় । পোষাক থকে আচার- আচরণ পর্যন্ত সব কিছুই এর অন্তর্ভূক্ত । তারা বিয়ের
প্রস্তাব দেয় তা না হলে সবর করে ।
সম্পাদক : বিডি নিউজ
ট্র্যাকার ৩/৯/২০১৬