BD NEWS TRACKER
টার্কি একটি পাখির নাম । এটি মূলত বন্য পাখি
হলেও বর্তমানে একে গৃহে পালন করা হচ্ছে । এটি অনেক বড় আঁকারের একটি পাখি ।
বাড়িতে প্রায় ছয়মাস পালন করলে এক একটি টার্কি পাখির স্ত্রী জাতের ওজন হয়
প্রায় ৮ থেকে ১০ কেজি এবং পুরষ জাতের ওজন হয় প্রায় ১৫ থেকে ২০ কেজি । একে
বাড়িতে দেশী মুরগীর মতে করে পালন করা যায় । বর্তমানে টার্কি পালন করে অনেক বেকার
যুবক তাঁদের আর্থিক স্বচ্ছলতা এনেছে ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টার্কি পাখির মাংস বেশ জনপ্রিয়। টার্কি বর্তমানে
মাংসের প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনীতিতে অবদান রাখছে । এর মাংসে প্রোটিন বেশি , চর্বি কম এবং আন্যান্য পাখীর মাংসের চেয়ে
বেশি পুষ্টিকর। পশ্চিমা দেশসমূহে টার্কি ভীষণ জনপ্রিয় । তাই সবচেয়ে বেশি টার্কি
পালন হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ডে, ব্রাজিলে । তবে বাংলাদেশেও এখন ব্যাক্তি
উদ্যোগে টার্কি চাষ শুরু হয়েছে । তৈরি হয়েছে ছোট-মাঝারি অনেক খামার। ইলেকট্রনিক
মিডিয়া আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে বেকার যুবকদের অনেকেই টার্কি পালনে
আহগ্রী হয়ে উঠেছেন। আপনি ইচ্ছা করলে আপনার বাড়িতে টার্কির চাষ করতে পারেন । আসুন
জেনে নেই কিভাবে আপনি আপনার বাড়িতে টার্কির চাষ করবেন ।
বাড়িতে টার্কি পালন করার জন্য আপনাকে প্রথমে
উপযুক্ত ঘর তৈরি করতে হবে । এক্ষেত্রে বেশ কিছু পদ্ধতি আছে । এক্ষেত্রে আপনি
টার্কির ঘর বানানোর জন্য বাঁশ, বেত, টিন, ছন, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন । ঘরের বেড়া
বাঁশের দরজা বা কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি করতে হবে ।
০-৪ সপ্তাহ ১.২৫ ব.ফু ২.৫ সে.মি. ১.৫ সে.মি.
৫-১৬ সপ্তাহ ২.৫ ব.ফু ৫.০সে.মি. ২.৫ সে.মি.
১৬-১৯ সপ্তাহ ৪.০ ব.ফু ৬.৫ সে.মি. ২.৫ সে.মি.
টার্কি সাধারণত দেশী মুরগীর মত পালন করতে হবে
। দেশি মুরগীর মত টার্কির খাবার সাধারণত সহজলভ্য । টার্কি পালনে আলাদা কোন সুষম
খাবারের প্রয়োজন পড়ে না ।বেড়া বা দেওয়ালে আলো বাতাস চলাচলের জন্য
ছিদ্র থাকতে হবে। টার্কি খোলামেলা পরিবেশেও পালন করা যায় । কিংবা আপনি অর্ধ
আবদ্ধ অবস্থায় পালন করতে পারেন।
বর্তমানে বাজারের ব্রয়লার মুরগি ও পশুখাদ্য মিক্সচারই
তাদের সাধারণ খাবার । এছাড়াও টার্কি সাধারণত বেশ কিছু খাবার খেয়ে থাকে । যেমন
ধান গম, ভুট্টা, সয়াবিন মিল, ঘাসের বীজ, সূর্যমুখী বীজ, ঝিনুক গুড়া ইত্যাদি । তবে মনে রাখবেন টার্কিরা সবুজ শাকপাতা ভালবাসে । তাই
টার্কির খাবারের সাথে প্রত্যেহ ৬০% সবুজ শাকসবজি মিশিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন ।
একটি আদর্শ খাদ্য তালিকা নিচে দেয়া হলো:
ধান ২০% ,গম ২০%, ভুট্টা ২৫%, সয়াবিন মিল ১০%, ঘাসের বীজ ৮% সূর্যমুখী বীজ ১০%, ঝিনুক গুড়া ৭%, মোট ১০০% ।
রোগ বালাই
পক্স, সালমোনেলোসিস, কলেরা , রানিক্ষেত মাইটস ও এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশি
দেখা যায় । পরিবেশ ও খামার অব্যবস্থাপনার কারণে অনেক রোগ সংক্রমণ হতে পারে ।
টিকা প্রদান
১ম দিন এন ডি ( বি১ স্টেরেইন )
৪ ও ৫ সপ্তাহে ফাউল পক্স
৬ সপ্তাহে এন ডি
৮-১০ সপ্তাহে ফাউল কলেরা
প্রজনন ব্যবস্থা
একটি বড় টার্কি পাখির জন্য ৪- ৫ বর্গ ফুট
জায়গা নিশ্চিত করতে হবে । ঘরে পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে । ঘর
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে । একটি মোরগের সঙ্গে ৩ বা ৪ টি মুরগী রাখা যেতে পারে
। ডিম সংগ্রহ করে আলাদা জায়গায় রখতে হবে । ডিম প্রদানকালীন সময়ে টার্কিকে আদর্শ
খাবার এবং বেশি পানি দিতে হবে ।
বাচ্চা ফুটানো
টার্কি নিজেই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায় ।
তবে দেশী মুরগী অথবা ইনকিউবেটর দিয়ে বাচ্চা ফুটালে ফল ভালো পাওয়া যায় । তাছাড়া
বাচ্চা উৎপাদনের জন্য সময় নষ্ট না হওয়ার কারণে টার্কিও ডিম উৎপাদন বেশি করে ।
টার্কি কেন দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে ।
১। টার্কির মাংস সুস্বাদু এবং মাংস উৎপাদন
ক্ষমতাও ব্যাপক ।
২। এটা ঝামেলাহীন ভাবে দেশী মুরগীর মত পালন
করা যায় ।
৩। টার্কি পাখি ব্রয়লার মুরগীর চেয়ে দ্রুত
বাড়ে ।
৪। টার্কি পালনে তুলনামূলক খরচ অনেক কম, কারণ এরা দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি শাক, ঘাস,লতাপাতা খেতেও পছন্দ করে ।
৫। টার্কির মাংসে প্রোটিনের পরিমাণ বেশি, চর্বি কম । তাই গরু কিংবা খাসীর মাংসের
বিকল্প হতে এ পাখির মাংস।
৬। টার্কির মাংসে অধিক পরিমাণ জিংক, লৌহ, পটাশিয়াম, বি৬ ও ফসফরাস থাকে । এ উপাদানগুলো মানব
শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। এবং নিয়মিত এই মাংস খেলে কোলেস্টেরল কমে যায় ।
৭। টার্কির মাংসে এমাইনো এসিড ও ট্রিপটোফেন
অধিক পরিমাণে থাকায় এর মাংস খেলে শরীওে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ।
৮। টার্কির মাংসে ভিটামিন ই অধিক পরিমাণে
থাকে ।
৯। টার্কি দেখতে সুন্দর, তাই বাড়ির সোভা বর্ধন করে ।
যাদের অতিরিক্ত চর্বি যুক্ত মাংস খাওয়া নিষেধ
অথবা যারা নিজেরাই এড়িয়ে চলেন, কিংবা যারা গরু/ খাসীর মাংস খায়না, টার্কি তাদের জন্য হতে পারে প্রিয় একটি বিকল্প ।
তাছাড়া বিয়ে, বৌ-ভাত, জন্মদিন সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাসীর/গরুর মাংসের
বিকল্প হিসেবে টার্কির মাংস হতে পারে অতি উৎকৃষ্ট একটি খাবার। এবং গরু/ খাসীর
তুলনায় খরচ ও হবে কম ।