মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সানি লিওন ঢাকায় প্রোগ্রাম করতে আসবেন এতে কার কি বলার আছে! পর্ণোগ্রাফি তারকা এমন এক সময় আসছেন যখন বাংলাদেশে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙ্গে ধর্ষণের ঘটনায় নয়া রেকর্ড চলছে। মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যখন প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় ধর্ষণের খবর প্রকাশ পাচ্ছে। সামাজির নিরাপত্তার সূচক এমন এক পর্যায়ে নিচে গেছে চাঁদাবাজীর জন্যে চাঁদপুরে গার্লস স্কুলের মেয়েরা মারধরের হাত থেকে রেহাই পায়নি। এখন সানি লিওন এলে এসব যন্ত্রণা কিছুক্ষণ ভুলে থাকার একটা মাজেজা হয়ত আয়োজক থেকে শুরু করে এদেশের রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতির কান্ডারী বাবুরা পেয়ে গেছেন। অপসংস্কৃতির মূর্ত প্রতীক থেকে থাকলে সানি লিওনকে নিয়ে ভারতবর্ষে কত কি কেচ্ছা ঘটে গেছে তা কারো অজানা নয়।
সংস্কৃতির কোনো সীমানা নেই। আকাশ সংস্কৃতির জোরে তা দেশ বিদেশ ছাড়িয়ে কোন ভূভাগের মানুষের ওপর চেপে বসে তার ঠিক-ঠিকানা নেই। স্টার জলসার নাটক দেখে বা পোশাক আশাকে ভারতীয় সিরিয়ালের থাবায় আত্মহননের একাধিক ঘটনা ঘটছে। টিভি সিরিয়ালের বদৌলতে ঈদ বাজারে শাড়ির ক্ষেত্রে ভারতের দাপট বজায় রাখতে রেশম কা জরি, ঝিলিক, রাধিকা, ওহ লায়লা, তিসমার খান, জারা জারা, আয়শা টাকিয়া, দিল দো কলি, বধূয়া, অন্তরা ইত্যাদি শাড়ির মধ্যে পাথর আর চুমকির কারুকাজ করা গাঢ় রঙের শাড়িতে বাজারের দোকান ভরে আছে। সানি লিওন যখন নেচে উঠবেন ঢাকা মঞ্চে তখন এসব পোশাক প্রাধান্য পাবে নাকি তার দেহবল্লরীর শোভা ঝলক দেবে তা সেপ্টেম্বরেই বোঝা যাবে।
কিন্তু ঢাকায় সানি লিওনের সফরের পর এর রেশ আমাদের সমাজে কি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তাও কম বিবেচ্য নয়। এক কথায় যুব সমাজকে বিভ্রান্ত করে রাখা, পুঁজি ও প্রযুক্তি বিমুখ করে রাখা, শিক্ষাকে পণ্য করে তা শুধুমাত্র সমাজের উঁচুতলার জন্যে সীমিত করে দেয়া, নৈতিক অবক্ষয়ে ইয়াবা, ব্লু অ্যাশের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়িয়ে দেয়ার মত নানা কর্মকা-ে সানি লিওনের সফর শুধু ঢেউ তুলবে না জোয়ারও সৃষ্টি করবে। ধর্ষণে যখন আমরা সবাই কমবেশি আক্রান্ত সামাজিকভাবে তখন নিজের সংস্কৃতি নিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ের মত কা-ারীর বড্ড অভাব এদেশে।
সানি লিওন না এলে বাংলাদেশের উন্নয়ন বেজায় মার খাবে না। মার্ক জুকারবার্গ এলে বরং কাজের কাজ হত। যারা উন্নয়ন, প্রযুক্তি, পুঁজি ব্যবহারের জন্যে বিশ্বনায়ক হয়ে আছেন তাদের দুই একজনকে ঢাকায় আনতে পারলে সত্যিই খুব কাজের কাজ হত। এতদিনে ন্যানো টেকনোলজির একটা ধারা শুরু হয়ে যেত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। সমাজকে কোন ধারায় নিয়ে যেতে পারলে নতুন প্রজন্ম বিনির্মাণের পথ ধরতে পারে তা নিয়ে চিন্তাশীল মানুষের ঐক্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলতে পারছে না বলেই আয়োজকরা সানি লিওনকে বেছে নিয়েছেন। এতে সহজে পয়সা কামানো যায়, কিন্তু এধরনের আয়োজন যে সমাজে কত ব্যাপক উদগ্র বাসনা ছড়িয়ে যায় যার রেশ টের পাওয়া যায় ধর্ষণের রেকর্ড থেকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সামান্য ক্ষতি’ যারা পড়েছেন তারা বুঝতে পারেন রানির ভেজা কাপড় শুকাতে দরিদ্রদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া কতখানি জরুরি ছিল। সানি লিওনকে এনে যারা বান্দর নাচ নাচাবেন তারা সমাজের গায়ে আগুন ধরানোর একটা বন্দোবস্ত করছেন তা নিজস্ব সংস্কৃতির ধারক-বাহকরা না বুঝলেও রাজস্ব বোর্ডের ভিজিলেন্স টিম বুঝতে পারলেও একটা শেষ রক্ষা হত।
সেপ্টেম্বরে ঢাকায় আসছেন সানি লিওন। পাকিস্তানের গায়ক আতিফ আসলাম গান গাওয়া শেষ করলেই মঞ্চে উঠবেন সানি লিওন। সানি লিওন কি ‘জিনিস’ তা ইন্টারনেটের কল্যাণে কারো অজানা নয়। তিনি ঢাকায় নাচবেন। নাচাবেন। চার রকমের চার হাজার টিকিটের সর্বনিম্নটির মূল্য ১৫ হাজার টাকা। সানি লিওনের নমুনা যারা খুব কাছে থেকে চর্মচক্ষুতে দেখবেন তাদের তো একটু বেশি দিতেই হবে। কুছ পরোয়া নেই কারণ এর আগে শাহরুখ খান ঢাকায় আর্মি স্টেডিয়ামে এলে তখনকার স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী মঞ্চের সামনে মাটিতেই বসে পড়েছিলেন। শাহরুখের সঙ্গে রানি মুখার্জি এসেছিলেন। এবার সানি লিওন এলে অনেকেই আতঙ্কে আছেন, কেউ মাটিতে শুয়ে না পড়েন!
0 comments:
Post a Comment
পাঠকের মন্তব্য আবশ্যক