চল্লিশ মানে বুড়িয়ে যাওয়া নয় |
বয়স হওয়া মানেই কিন্তু বুড়িয়ে যাওয়া নয়। নয় জীবনের ফুলস্টপ। বরং এই চল্লিশ থেকেই শুরু হয় জীবনের এক নতুন অধ্যায়। কুড়িতে বুড়ি আর চল্লিশে চালশে—এই প্রবাদগুলোকে এখন নতুন করে সাজানোর সময় এসেছে। কুড়ি পেরিয়ে চল্লিশে চালশে তো দূর অস্ত, এখন অনেকের শুরু হয়। সেই বয়সেও তারুণ্যের দীপ্তি ছড়াচ্ছেন অনেকেই। অনেকের চেহারা দেখে বোঝারই উপায় থাকে না, তিনি কুড়ি নাকি চল্লিশের মানুষ। যেমনটা সবাই বলেন যে বয়স একটা সংখ্যামাত্র। অনেকে সেটা প্রমাণ করে ছেড়েছেন।
আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে আর এই ধাপে ধাপে পরিবর্তিত আমিকে ভালোবেসে শুরু করতে হবে নতুন জার্নি। আর এই জার্নি যে খুব কঠিন তা-ও কিন্তু নয়। শুধু নিজেকে একটু গুছিয়ে নেওয়া। সময়কে ধরে রাখা যায় না। মনে হয় এই তো কিছুদিন আগে খুব সুন্দর করে সেজেগুজে ঝলমলে হয়ে কলেজ অথবা ভার্সিটি ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়িয়েছ। কিন্তু এখন আয়নার সামনে দাঁড়ালেই কেমন যেন মনটা ভরতে চায় না নিজেকে দেখে। সহজেই চোখে পড়ে চোখের নিচে, ঠোঁটের কোনায় হালকা বলিরেখা। চুলেও দেখা দিয়েছে রুপালি রেখা। কারণে এই চল্লিশ বছর বয়সে পা দিয়ে একজন মানুষ বিষণ্নতায় ভোগে তা হলো খুব কাছের মানুষটির চোখে নিজেকে আগের মতো লাগছে কি না এই চিন্তা। আর এটিই মনে হয় অন্য সব চিন্তার চেয়ে বেশি ভোগায়। এই চল্লিশে এসে আরেকটি চিন্তা মহিলাদের একটু একটু করে বিষণ্নতার দিকে ঠেলে দেয় তা হলো মেনোপজ। আমরা সবাই এই ডিজিটাল যুগে মেনোপজ সম্পর্কে কমবেশি অবগত। ঋতুস্রাব, যা প্রতি মাসের একটি রুটিন ছিল তা হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেলে মনে হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক যে আমি বুঝি শেষ!
হাই ব্লাডপ্রেশার .ডায়াবেটিস ,শ্বাসকষ্ট ,হাড়ের গিঁটে গিঁটে ব্যথা এগুলো খুবই কমন, তাই এই ভয় মনে আসাটাও খুব স্বাভাবিক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন এটাই তো জীবনের চিরন্তন সত্যি। কথায় আছে না, ‘চেঞ্জ ইজ দ্য অনলি কনস্ট্যান্ট ইন লাইফ।’ বয়সের সঙ্গে প্রকৃতির নিয়মে মানুষ বদলাবেই। আর এই প্রতিনিয়ত বদলে যাওয়া ‘আমিকে’ মেনে নিয়েই তো নতুন করে বাঁচতে শিখতে হবে।
প্রয়োজন নতুন রুটিন
নিজের চেহারায় যে পরিবর্তন এসেছে তাকে দেখে ভয় না পেয়ে, হতাশ না হয়ে বরং নিজের সৌন্দর্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। বয়স হয়েছে বলে পারলারে যাওয়া যাবে না, ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে তারা কী বলবে? এসব চিন্তাকে পাত্তা না দিয়ে মাসে একবার হলেও পারলারে যাও। সেখানে মুখের সঙ্গে সঙ্গে চুলেরও যত্ন নাও। হাত পায়ের যত্ন নাও। এভাবে নিজেকে প্যাম্পার করলে দেখবে তোমার সৌন্দর্য অবশ্যই বেরিয়ে আসবে। তোমাকে টিনএজারদের মতো না দেখাক সমস্যা নেই। কারণ, প্রত্যেক বয়সেরই একটি সৌন্দর্য আছে। তুমি সেটাকেই ঠিকমতো বহন করো। দেখবে হতাশা তোমার থেকে অনেক দূরে পালিয়ে গেছে। নিজের বয়সের ধরন অনুযায়ী সুন্দর পোশাক পরে তবেই বাইরে যাবে। এতে করে মানুষ ভালো কমপ্লিমেন্ট দেবে, যার ফলে তোমার সঙ্গে সঙ্গে তোমার সবচেয়ে কাছের মানুষটিও দেখবে ভালো বোধ করবে।
অনেক কিছু মেনে নেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি
কার্যক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হতে পারে। ছেলেমেয়েরা নিজের ব্যাপারে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে, এ রকম সুযোগ করে দিলে ওরাও স্পেস পাবে। যার ফলে ওরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। সন্তানদের ব্যস্ততা বাড়বেই। তাদেরও পৃথক সংসার হবে। এগুলোকে বুঝলেই আর নিজেকে নিয়ে একাকিত্ব বা ইনসিকিউরিটির চিন্তা আসবে না।
নিয়মিত রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করে শরীরে কোনো অসুখ আছে কি না জানতে হবে। হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিসের সমস্যা ধরা পড়লে আগেভাগেই এগুলোর ব্যাপারে সচেতন হতে পারলে রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এর ফলে কারও ওপর বোঝা হওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ না রেখে তাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে আড্ডা দিতে হবে। মাঝেমধ্যে বেড়াতে যেতে হবে। এতে মন প্রফুল্ল থাকবে। ভবিষ্যতের জন্য সুন্দরমতো সবকিছুর পরিকল্পনা করে বয়স হওয়া মানেই কিন্তু বুড়িয়ে যাওয়া নয়। নয় জীবনের ফুলস্টপ। বরং এই চল্লিশ থেকেই শুরু হয় জীবনের এক নতুন অধ্যায়। আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে আর এই ধাপে ধাপে পরিবর্তিত আমিকে ভালোবেসে শুরু করতে হবে নতুন জার্নি। আর এই জার্নি যে খুব কঠিন তা-ও কিন্তু নয়। শুধু নিজেকে একটু গুছিয়ে নেওয়া। নানা কারণে মনে বাসা বাঁধা বিষণ্নতাকে বাই বাই জানানোর সময়ও এটা।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়স বাড়ার গতিটাকে হয়তো রোধ করা যায় না। কিন্তু চেহারায় বয়সের ছাপটাকে এড়ানো যেতে পারে। এমনটাই জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা। চল্লিশের কোঠায় এসে যে সমস্যা প্রবলভাবে দেখা দেয়, তা হলো হজমপ্রক্রিয়া কমে যাওয়া। এ ছাড়া মুখের টিস্যুগুলো ঝুলে যাওয়াও এ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক সমস্যা। টিস্যুগুলো ঝুলে গেলে মুখের নিচে পড়ে ডাবল চিন। ফুলে গোল হয়ে যায় চোয়ালের দুই ধার। এসব সমস্যার পরিত্রাণ পেতে নিয়মিত নিচে থেকে ওপরের দিকে ম্যাসাজ করা উচিত। পারলারে সাধারণত এ ধরনের ম্যাসাজে স্টোন বা পাথরের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হাতের কাছে সেটা থাকলে ভালো। তবে না থাকলে চামচ ব্যবহার করার কথা জানালেন রাহিমা সুলতানা।
অনেকে মনে করেন, বয়স তো হলোই যত্নের আর কি প্রয়োজন। এটা ঠিক নয়, বয়স বাড়বেই, সব বয়সেরই সৌন্দর্য আছে, সব বয়সেই নিজের যত্ন নিতে হয়, বয়স বাড়লে যত্ন আরো বাড়াতে হয়। কারন আয়নায় যতবার নিজেকে দেখে আপনি আনন্দিত হবেন, বেচে থাকার আনন্দও আপনি তত বেশী উপভোগ করবেন।
চল্লিশ বছর হলেই আমাদের চেহারায় বাধ্যর্ক্যের
ছাপ পড়ে যায়। শুধু নারীদেরই নয়, পুরুষদেরও
ত্বক থেকে তারুণ্য বিদায় নিতে শুরু করে। তাই ত্বকের যত্ন নেওয়া
খুবই প্রয়োজন। না হলে অকালেই বুড়িয়ে যেতে হবে। এমন ৫ টি কৌশল আছে যেগুলি ঠিক মতো মেনে চললে পঞ্চাশেও চেহারায় তারুণ্য ধরে রাখতে
পারবেন।
• বিভিন্ন ফলের রস ত্বকের জন্য খুব উপকারী। যেমন, গাজর,
শসার রস, টোম্যাটো, কমলাবেলুর মতো
ফলের রস খেতে পারলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
• গোসলের আগে গোটা শরীরে অলিভ অয়েল মেখে নিতে পারলে তা ত্বকের তারুণ্য
ধরে রাখতে সাহায্য করে।
• পানিতে ভেজানো খেজুর ও ছোলা মিশিয়ে খেতে পারলে পেট থাকবে পরিষ্কার,
ত্বক হয়ে উঠবে ঝকঝকে ও তারুণ্য ভরা।
• পুরুষদের চূড়ান্ত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও ১৫ দিন অন্তর
অন্তত একবার ফেশিয়াল করা উচিত। না, তার
জন্য পার্লারে যাওয়ার দরকার নেই। মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে
ত্বকে লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। বা মুলতানি মাটিতে সামান্য গোলাপজল মিশিয়েও মুখে মাখিয়ে রাখুন। ১০-১৫ মিনিট রেখে ভাল
করে ধুয়ে ফেলুন। উপকার পাবেন।
• সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা উষ্ণ জলের সঙ্গে এক চামচ মধু আর লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারলে পেট থাকবে পরিষ্কার আর
শরীর থাকবে ঝরঝরে। ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও
মসৃণ।
এই নিয়মগুলি মেনে চলতে পারলে সুফল পাওয়া যাবে। আপনার চেহারায় যৌবন
হবে দীর্ঘস্থায়ী।
নারীদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যৌন চাহিদাও কমতে থাকে
চল্লিশের পর দম্পতিদের যৌন ক্ষমতা, করণীয় জেনে নিন
নারীদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যৌন চাহিদাও কমতে থাকে। এক্ষেত্রে সমবয়সী পুরুষদের চেয়ে পিছিয়ে থাকেন তারা। এমনকি চল্লিশের পর তাদের আর সেই চাহিদাও থাকে না।
যৌনতার এ ধরনের সমস্যার সমাধান হতে পারে মানসিক
স্থিরতা তৈরি করা। এজন্য একটি উপায় হলো
ইয়োগা বা যোগাসন। এছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন সাঁতার কাটা ও সঙ্গীত
শোনাও হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সমাধান। সমস্যা যদি সমাধান না হয় তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
ডা. রজন এ সমস্যার সমাধানে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট বা মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি জানান, আমরা যখন মানসিক
চাপের মাঝে থাকি তখন দেহের কিছু হরমোন নিঃসরিত হয়
না, যে হরমোনগুলো যৌনতার আগ্রহ তৈরি করে।
এর কারণ হতে পারে মানসিক চাপের কারণে আপনার দেহের বিভিন্ন অঙ্গের বাড়তি চাপ গ্রহণ। এটি আবেগগত ও মানসিক চাপও তৈরি করে।
এক্ষেত্রে সমাধান হিসেবে দম্পতিদের উভয়েরই চেষ্টা করতে হবে। এজন্য
যৌনজীবন নিয়ে বিভিন্ন রকম অভিজ্ঞতার চেষ্টা
করুন। বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন অবস্থানে বা পজিশনে
যৌনমিলন করুন এবং একই সময়ে যৌনমিলনে লিপ্ত না হয়ে বরং বিভিন্ন সময়ে যৌনমিলনে লিপ্ত হোন।
যদি আপনার মধ্যে উদ্বেগ থাকে যে আপনি ঠিকমতো যৌনমিলনে সক্রিয় হয়ে
উঠতে পারবেন কিনা সেক্ষেত্রে সেটা আপনার
যৌনসঙ্গীর সাথে আলাপ করুন। তবে যৌনমিলনের সময় এ
কাজটি না করে আগে করুন।
আপনাকে কোন বিষয়গুলো যৌনকার্যে সক্রিয় করে তোলে সে বিষয়ে আপনার
সঙ্গীর সাথে আলাপ করুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
যৌনতা স্বাভাবিক করার পরামর্শগুলো যদি কাজ না করে কিংবা সমস্যা যদি
বেশি হয়ে যায় তাহলে চেষ্টার পরও সমাধান নাও
হতে পারে। ফলে সমস্যা সমাধানে বিশেষজ্ঞের
পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
যৌনতা যদি জীবন থেকে হারিয়ে যায় তাহলে তা মোটেই ভালো লক্ষণ নয়।
সুস্থা থাকার জন্য যৌনতার গুরুত্ব রয়েছে বলে
মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এটি আপনার সঙ্গীর সঙ্গে
মানসিক সম্পর্কও তৈরি করে। আর যৌনতার অভাবে স্বাভাবিক সম্পর্ক বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
0 comments:
Post a Comment
পাঠকের মন্তব্য আবশ্যক