বুড়িয়ে যাচ্ছি—এই ভাবনাটা প্রায়ই আমাদের ভাবায়। অনেক সময় দেখা যায়, অনেকে খুব নিয়ম মেনে চলার পরও নিজের বুড়িয়ে যাওয়া ভাবটা কমাতে পারেন না। মূলত এর পেছনে দৈনন্দিন জীবনে কিছু সূক্ষ্ম অভ্যাস আমাদের ‘বুড়িয়ে যাওয়া’র মূল কারণ হিসেবে কাজ করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক মনের অজান্তে কোন অভ্যাসগুলো জলদি শরীর ও মনের বয়স বাড়িয়ে দিচ্ছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, মন যদি ভালো থাকে, তাহলে বয়স কখনোই বাড়বে না।
প্রত্যেকেরই পরিমিত পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন। একজন
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন সাত ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। কিন্তু অনেক সময় সাত
ঘণ্টা ঘুমানো সম্ভব হয় না। তবে একটানা ঘুমের অভাব হলে তা শরীরে বাড়তি চাপ
ফেলে। শুধু তা-ই নয়, আমরা অনেক সময় অনেক চিন্তাগ্রস্ত থাকি। বয়স অনুযায়ী
আমাদের অতিরিক্ত মানসিক চাপও আমাদের চেহারায় দ্রুত বয়সের ছাপ ফেলে দেয়। তাই
নিজেকে ভালো রাখতে এবং অবশ্যই অল্প বয়সে বুড়িয়ে না যাওয়ার জন্য কিছু চাপ
এড়িয়ে চলাই ভালো।
অতিরিক্ত বসে থাকা
আমাদের অনেকেরই ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেলিভিশন দেখার অভ্যাস আছে
কিংবা কাজ করতে হচ্ছে সারা দিন বসে বসে। এটিও শরীরের জন্য খারাপ। একটানা
অনেকক্ষণ বসে থাকা শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন আমাদের মেরুদণ্ডে ব্যথা,
কোমরব্যথা, এমনকি পেটের মেদ বাড়াতেও সাহায্য করে। এড়িয়ে চলুন অতিরিক্ত বসে
থাকা। সুযোগ পেলে কাজের ফাঁকে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করা বা একদমই সুযোগ না
পেলে বসে ব্যায়াম করতে হবে। এতে দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা খানিকটা কমবে।
এক পাশ ফিরে ঘুমানো
আমরা অধিকাংশই এক পাশ ফিরিয়ে ঘুমোতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
কিন্তু এ অভ্যাস শরীরের ভারসাম্য সমানভাবে রাখতে দেয় না। শুধু তা-ই নয়,
অনেক সময় আমাদের পেশি পুলেরও সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো
উপায়ে ঘুমানোর জন্য পুরো পিঠের ওপর ভর দিয়ে সোজা হয়ে শোয়াকে উত্তম পন্থা
হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। একইভাবে সঠিকভাবে বসার ব্যাপারেও রয়েছে
নির্দেশনা। অনেকেই বসে কাজ করার সময় খানিকটা আরামের জন্য কুঁজো হয়ে বসেন
কিংবা একটু হেলে বসেন; এটিও শরীরের বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।
কম চর্বি ডায়েট
নিজেকে ঝরঝরে রাখার জন্য কম চর্বির খাবার খেতে কতই না
দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু অনেক সময় এই চর্বি বাদ করতে গিয়ে আমরা মনের
অজান্তেই আমাদের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডকেও ছাঁটাই করে দিই। আমাদের মুখের
বলিরেখা ও লাবণ্য ধরে রাখতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড খুবই প্রয়োজনীয় উপকরণ।
কিন্তু শরীরকে ঝরঝরে রাখতে গিয়ে হারিয়ে ফেলছি নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্য।
নো সুগার ডায়েট
অনেকে ভাবেন, চিনি না খেলেই অনেক চর্বি এড়িয়ে চলা সম্ভব।
কিন্তু এখানেও খানিকটা ভুল ভাবনায় নিজেদের আটকে ফেলেছি। পরিমিত পরিমাণে
চিনিও শরীরের জন্য দরকারি। একেবারে বাদ দিয়ে দিলে অনেক ক্ষেত্রে তা উল্টো
ফল দিতে পারে।
স্ট্র বাদ দিন
আমরা প্রত্যেকেই কমবেশি কোমল পানীয় পান করে থাকি।
আবশ্যিকভাবে স্ট্র বাদ দিয়ে তা পান করা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব হয়ে পড়ে।
কিন্তু দীর্ঘদিন স্ট্র ব্যবহারের ফলে আমাদের লিপ লাইনে ধীরে ধীরে রিংকেল
পড়তে শুরু করে। তাই স্ট্র বাদ দিয়ে সরাসরি গ্লাস কিংবা ওয়ান টাইম গ্লাস
ব্যবহার করা ভালো। অপর দিকে যাঁরা খুব একটা কোমল পানীয়ের নেশায় নেই কিন্তু
সিগারেটের নেশায় আছেন, তাঁদের জন্যও আছে সতর্কবাণী। কেননা, আপনি যখন
সিগারেটের ধোঁয়া নিচ্ছেন, তখন একইভাবে আপনারও স্ট্র ব্যবহার করা ব্যক্তির
মতো লিপ লাইন রিংকেল পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
রোদ থেকে এড়ানো সব সময়
খুব বেশি রোদ না হলে আমরা রোদ এড়িয়ে চলি কিন্তু এটিও ঠিক
নয়। সব সময়ই রোদের তাপ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
কেননা, রোদে পোড়া চামড়া চেহারায় আলাদা ভারিক্কিও তৈরি করে। একইভাবে
অতিরিক্ত শুষ্ক পরিবেশও আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। এটি আপনার চামড়ার
স্বাভাবিক আর্দ্রতা কেড়ে নিয়ে আপনার শরীরের চামড়া আরও শুষ্ক করে তোলে।
শুষ্ক ত্বকে তৈলাক্ত ত্বকের চেয়ে দ্রুত বলিরেখা পড়ে। তাই চেষ্টা করুন
স্বাভাবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশে থাকার।
সূত্র প্রথম আলোও
সূত্র প্রথম আলোও
০৩ মে ২০১৭, ১১:২৩
0 comments:
Post a Comment
পাঠকের মন্তব্য আবশ্যক