রোজা থাকার শারীরিক উপকার
www.bdnewstracker.blogspot.com |
রমজান মাস এলেই প্রত্যেক মুসল্লি রোজা রাখার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সংযমের এই মাসে আমরা কেন না খেয়ে থাকি সেটা কি কেউ চিন্তা করেছেন? “আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্যেই করে থাকেন।” তাহলে এখানে কি কোন ধরনের মঙ্গল আছে আমাদের জন্য?
রোজা থাকলে শরীরের ক্ষতিকারক ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে আসে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
রক্তের সুগারের মাত্রা কমিয়ে আনে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
শরীরে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ সৃষ্টির সম্ভাবনা কমিয়ে আনে।
রোজা থাকলে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
শরীরের কোষের পুনর্গঠনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
খাওয়ার ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
দীর্ঘায়ু প্রদান করে।
মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং কাজে মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
শরীরের স্বাভাবিক যে রোগ নিরাময় ক্ষমতা থাকে সেটা আরও কার্যকরী করে তোলে।
শরীরের ফ্যাট কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
এবার আসি একটি জাগতিক প্রশ্নে যা অনেকের মনেই এতক্ষণে লাফ দিয়ে উঠেছে; এত উপকার থাকা স্বত্তেও সকল মুসলিমদের এই উপকারে উপকৃত হতে দেখা যায় না কেন?
উত্তরটি খুবই সহজ। এর উত্তর হলো অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ। আমরা সারা দিন রোজা থেকে যখন ইফতার করা শুরু করি তখন যেন আর বাধ থাকেনা। সব খাবার একসাথে খাওয়া লাগবে। এছাড়া এই খাবারের লিস্টে ভাজাপোড়া ও মিষ্টি জাতীয় খাবারের সাথে আরও বিভিন্ন ধরনের জাংক ফুড তো থাকেই। এগুলো বর্জন করে ভালো এবং পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করলে আপনিও রোজার এই সকল সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
ইফতারকে ঘিরে বাঙালি মুসলমানদের আয়োজনের যেন শেষ নেই। পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে প্রতিদিন রোজা শেষে ইফতারে বসেন সবাই। ইফতারে সাধারণত পুষ্টিগুণের চেয়ে মুখের স্বাদকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। তবে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর ইফতার পুরো রমজান মাস জুড়ে আপনাকে সুস্থ ও সবল রাখবে। চলুন জেনে নেয়া যাক একটি পুষ্টিগুণসম্পন্ন ইফতারের টেবিলে কী কী থাকা জরুরী।
- খেজুর- একটি আদর্শ ইফতারের খাদ্য তালিকায় প্রথমেই রাখা হয় খেজুর। সারাদিনের দুর্বলতা দূর করতে ও শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে খেজুরের জুড়ি নেই।
- পানি- বলা বাহুল্য, রোজা খুলে এক রাশ খাবারের মধ্যে প্রথমেই যেদিকে চোখ যায় তা হচ্ছে পানি। এক্ষেত্রে কিছু খেজুর খেয়ে পরিমান মত পানি পান করে নিন।
- স্যুপ- পিয়াজু, বেগুনী, চপ এসব ভাজাপোড়া দিয়ে রোজা না খুলে টাটকা সবজিতে ভরা এক বাটি উষ্ণ স্যুপ খেয়ে নিন। স্যুপ একদিকে যেমন পানির অভাব পূরণ করে, অন্যদিকে পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে ও খাওয়ার আগ্রহ তৈরি করে।
- সালাদ- রোজার মাসে ভাজাপোড়া ও মশলাযুক্ত খাবারের ভিড়ে শাক-সবজি খুব কম খাওয়া হয়। তাই ইফতারে বেশি করে সালাদ খেয়ে সেই অভাব পূরণ করুন।
খেজুর, পানি, স্যুপ ও সালাদ দিয়ে শুরু করুন আপনার প্রতিদিনের ইফতার। এরপর আপনি আপনার পছন্দ মতো খাবার খেতে পারেন।
রমজান মাসে কোন কোন অভ্যাসগুলো এড়িয়ে চলবেন?
১। ইফতারে হঠাৎ করে প্রচুর খাবেন না।
২। ইফতারের পর চা, কফি ও সোডা জাতীয় খাবার গ্রহন থেকে বিরত থাকুন। এগুলোর পরিবর্তে প্রচুর পানি পান করুন।
৩। অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার খাবেন না। এগুলো বুক জ্বালা ও বদ হজমের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
৪। সেহ্রীতে অতিরিক্ত লবন জাতীয় খাবার যেমন আচার, সল্টেড বিস্কিট ইত্যাদি খাওয়া উচিৎ নয়।
৫। সেহ্রীতে অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার খেলে বেশি পিপাসা পায়।
৬। সেহ্রীতে অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
রমজান মাসের টিপস্!
১। সারাদিন তৃষ্ণামুক্ত থাকতে সেহ্রী ও ইফতারে চা-কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
২। ইফতারের পর কমপক্ষে আট গ্লাস পানি পান করুন।
৩। নিয়মিত নামায আদায় করুন।
৪। যাদের মাথা ব্যথা ও ঝিম ঝিম করে, তারা ইফতারের শুরুতে ৪-৫ টি খেজুর খেয়ে পানি পান করুন।
৫। স্যুপ, সালাদ ও খেজুর খেয়ে যদি খুব তাড়াতাড়ি আপনার ক্ষুধা মিটে যায়, সেক্ষেত্রে ইফতারের বাকি খাবার মাগরিবের নামায আদায় করে খেতে পারেন। এর ফলে আপনার হজমক্রিয়া নিয়মত্রান্ত্রিক উপায়ে হবে।
৬। যাদের চা খাওয়ার অভ্যাস আছে তারা একটি সুষম ইফতার গ্রহণের ২ ঘণ্টা পরে ১ কাপ চা খেতে পারেন।
৭। ভাজাপোড়া খাবারের পরিবর্তে বেক করা খাবার খেতে পারেন।
৮। রমজান মাস ধূমপান বর্জনের একটি সুবর্ণ সুযোগ। রোজা শুরু হওয়ার ১০-১৫ দিন আগে থেকেই একটু একটু করে ধূমপান কমিয়ে দিন। পুরো রমজান মাস নিজেকে ধূমপানমুক্ত রাখতে চেষ্টা করুন।
0 comments:
Post a Comment
পাঠকের মন্তব্য আবশ্যক