আপনি কি জানেন? বক্তৃতা দিতে অধিকাংশ লোকই ভয় পায়, আপনি একা নন। আপনাকে প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে যে “ভয়” আসলে কি ?বিপদের আশংকাই হলো ভয়। ভয় আসল নাকি কল্পিত?এটা সম্পুর্ণ কল্পিত। আমার এই লেখাটি ভয়ের সব কল্পনা জল্পনা ছাপিয়ে সুন্দরভাবে বক্তৃতা ও প্রেজেন্টেশনে সাহায্য করবে। কয়েকটা ধাপে বিষয়টা আলোচনা করছি।
প্রথম ধাপঃ ভয়ের মুখোমুখি হতে হবে
ভয়ের উৎস খুঁজে বের করুন। মানুষ যে কারণে সবার সামনে কথা বলতে ভয় পায় তা হলো অনিশ্চয়তা।এককথায় বলতে গেলে আমরা জানিনা বক্তৃতা বা প্রেজেন্টেশনের সময় কি ঘটবে। ভয়ের কারণটা নিশ্চয়ই এমন নয় যে আপনাকে এমন একটা বিষয়ে বলতে হবে বা প্রেজেন্টেশন করতে হবে হবে সে বিষয় সম্পর্কে আপনি কিছুই জানেন না।কারণটা হচ্ছে আপনি যখন কিছু বিষয়ে বলতে শুরু করবেন সেই বিষয় নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে। বক্তার অনিশ্চয়তায় ভোগার মত অনেক কারণ থাকতে পারে যেমন সবাই বক্তার আইডিয়া কিভাবে গ্রহণ করবে ? কিভাবে মুল্যায়িত হবে অথবা শ্রোতা কতটুকু প্রভাবিত হবে? যদি ভুল বলে ফেলি? যদি কেউ কথা শুনে হাসতে শুরু করে? ক্লাস প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মূল্যায়ন ব্যপারটার প্রভাব থাকে কিন্তু সত্যিটা এই যে যারা আপনার শ্রোতা তারা আপনার সফলতা চায়। আপনার কথাগুলো সাদরে গ্রহণ করার মন মানসিকতা তাদের রয়েছে। তারা আপনার সম্পর্কে কোনো বিরুপ ধারণা পোষণ করে না। আপনি যদি শুরুটা বেশ ভালো ভাবে করেন এবং বিষয়টার উপর স্বচ্ছ ধারনা দিতে পারেন , তবে আপনার ভয় অনেকাংশেই দূর হয়ে যাবে।ভয়কে ছুঁড়ে ফেলুন। যদি ভয়ে আপনার হাঁটু কাঁপতে থাকে তবে স্মরণ করুন, ভয়টা আসলে মিথ্যা , প্রমাণটাই হলো আসল।আপনি যে কারণে ভয় পাচ্ছেন তা আদৌ ঘটবে না ।যদি কোনো গড়মিল এর ব্যাপারে আগে থেকেই চিন্তিত থাকেন তবে বলছি ভয় করা বন্ধ করুন, যদি তেমন কিছু ঘটেও যায় তবে তা সাথে সাথে শুধরে নেওয়া যাবে। ভয়ের কারণেই গড়মিল হয়। ভয় না পেলে গড়মিল হওয়ার সম্ভবনা নেই। নিজের মনোবল বাড়িয়ে ভয় থেকে বেরিয়ে আসুন।
দ্বিতীয় ধাপঃ প্রস্তুতি
ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন। যে যে বিষয়ে আপনি বলবেন তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করুন। আপনার বক্তব্যের বর্ণনা তৈরি করুন এবং মূল পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করুন। প্রথমে কি বলবেন, বক্তৃতার মাঝখানে কি বলবেন, শেষটাই বা কিভাবে করবেন তা ঠিক করে নিন।
পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইড বা স্ক্রিপ্ট তৈরি করুন। সাধারণভাবে প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে স্লাইড ব্যবহারের সুযোগ থাকে। একে নিরাপত্তা চাদর হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। মূল পয়েন্টগুলো স্লাইডে ফ্লোচার্ট এবং চিত্রসহকারে সুন্দর ভাবে ব্যবহার করতে হবে । সাধারণ বক্তৃতার ক্ষেত্রে স্ক্রিপ্ট তৈরি করা যেতে পারে , তবে এতে মূল পয়েন্ট থাকবে যাতে পয়েন্টগুলো দেখে বক্তব্য সম্প্রসারণ করা যায়। তবে বক্তব্যের পুরোটা স্লাইডে বা স্ক্রিপ্টে নিয়ে দেখে দেখে যন্ত্রের মত বলে যাওয়া মোটেই উচিৎ হবে না ।
বারবার চর্চা করুন। ইংরেজীতে একটা কথা আছে “Practice makes a man perfect ”.জড়তা দূর করতে হলে চর্চার বিকল্প নেই। নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন এবং আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যান। আপনার বক্তৃতা চালিয়ে যান । এভাবে বেশ কয়েকবার করলে আপনার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে । আপনি চাইলে ল্যাপটপের ওয়েবক্যাম ব্যবহার করতে পারেন । ওয়েবক্যাম দিয়ে রেকর্ড করে পরবর্তীকে দেখে নিজেকে মুল্যায়ন করাটা অনেক সহজ হবে। যদি আপনার কাছে যথেষ্ট অবসর থাকে তবে বিভিন্ন ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, ডিবেটিং সোসাইটিতে সাময়িক/পুরোপুরি অংশ নিতে পারেন।এতে আপনি চর্চার সবচেয়ে ভালো সুযোগ পাবেন। আপনার জানা বিষয়গুলো নিয়ে এতে কাজ করতে পারেন।অজানা বিষয় বা কমজানা বিষয়ে বলতে গেলে মানসিক চাপ বরং বাড়তে পারে।
মনকে প্রশান্ত করুন। বক্তৃতার ঠিক আগে একটা পদ্ধতির অনুসরণ বেশ কাজে দেবে। T-repeater নামে একটা পদ্ধতির কথা বলছি। প্রথমে চোখ বন্ধ করে বুকভরে নিঃশ্বাস নিন। তারপর ইংরেজী T অক্ষর উচ্চারণ করতে করতে নিশ্বাস ছাড়ুন যেন টি টি টি টি...এমন শব্দ হয়।এভাবে কয়েকবার চেষ্টা করুন । এটা শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক হতে সাহায্য করবে।
তৃতীয় ধাপঃ মনোবল নিয়ে শ্রোতার সামনে দাড়ান
শ্রোতা আপনাকে দেখতে পায়,আপনার স্নায়ুচাপ দেখতে পায় না। প্রথমে যদি আপনার মধ্যে কিছুটা স্নায়ুচাপ কাজ করেও আপনি সফলভাবে আপনার বক্তৃতা শেষ করতে পারবেন । শ্রোতার উপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। মনোবল বাড়ান , স্বাভাবিকভাবে দাড়ান , হাসিমুখে আপনার বক্তব্য দিন।শ্রোতার ব্যপারে বেশি মাথা ঘামাবেন না। বক্তৃতার সময় একেক জনের প্রতিক্রিয়া একেক রকম হবে এটাই স্বাভাবিক । বক্তৃতা বা প্রেজেন্টেশনের সময় শ্রোতার সাথে চক্ষু-সংযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাণবন্ত বক্তব্যের জন্য বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেককে দেখা যায় আকাশের দিকে তাকিয়ে , মাথা নিচু করে বা অন্য কোনোদিকে তাকিয়ে বলতে থাকে। শ্রোতার চোখের দিকে তাকাতে ভয় পান । তাহলে শ্রোতার চোখের দিকে না তাকিয়ে কপালের দিকে তাকান । শ্রোতার কাছে মনে হবে যে আপনি তার দিকেই তাকিয়েছেন। এতে
আপনার ভয়ও কেটে যাবে।
সবশেষে যে কথাটা বলতে চাই , নিজের কল্পনাকে প্রসারিত করুন। আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান ? বক্তৃতা, প্রেজেন্টেশন আপনাকে সবার সামনে নিজের চিন্তা-চেতনা দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার সুযোগ দেয় । এটা আপনাকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে ।সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাপারে সাহসী করে তোলে। নিজের বন্ধু, সহকর্মী ,সমমনাদের সামনে কিছু বলতে আসলেই ভয়ের কিছু নেই। ভয়কে ছুঁড়ে ফেলুন, নিজের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিকে সাবলীলভাবে এগিয়ে যান ।
0 comments:
Post a Comment
পাঠকের মন্তব্য আবশ্যক