|
রমজানের রোজার প্রস্তুতি |
মাহে রমজানের রোজার প্রস্তুতি ও করনীয় এবং এই মহান মাসে কোন আমলগুলো অধিক
উত্তম?
খোশ আমদেদ মাহে রমজান!
রহমত,মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে আসে ইবাদতের মাস রমজানুল মোবারক।
রমজান মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে সত্যিকার
অর্থেই অনেকে এ মাসকে ইবাদত ও তাকওয়ার পরিবর্তে উদরপূর্তি ও চক্ষুবিলাসের মৌসুমে
পরিণত করে।
মুসলমানদের জীবনে সারা বছরের মধ্যে
রমজান মাসে আল্লাহর অসীম দয়া, ক্ষমা ও পাপমুক্তির এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয় বলেই এ পুণ্যময় মাসের
গুরুত্ব ও মর্যাদা এত বেশি। তাই বলা হয়,রমজান মাস হচ্ছে
ইবাদত,পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, জিকর,
শোকর তথা আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক বিশেষ মৌসুম। মাহে রমজান এমনই
এক বরকতময় মাস, আর এ
মাসে যে ব্যক্তি কোনো ফরজ আদায় করে, সে যেন অন্য সময়ের
৭০টি ফরজ আদায়ের নেকি লাভ করার সমতুল্য কাজ করল। এ মাসে হাজার বছরেরের ও
বেশী এবাদতের ছাওয়াব পাওয়া যায় লাইলাতুল কদর এর রাত্রে । জান্নাতের
দরজাগুলো উন্মুক্ত রাখা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ রাখা হয়। এটি সংযমের মাস আর
সংযমের ফল হচ্ছে জান্নাত।’ (মিশকাত)
রমজানের
করনীয় কিছু আমল
নৈতিক পরিশুদ্ধি ও আত্মগঠনের মাস
হিসেবে মাহে রমজানের আগমনে সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমান নামাজ-রোজার প্রস্তুতি
সম্পন্ন করতে নতুন পাঞ্জাবি-পায়জামা, টুপি কেনেন অথবা ধুয়ে-মুছে পাক-পবিত্র করে রাখেন। দৈনন্দিন জীবনযাত্রার
স্বাভাবিক কাজকর্ম সম্পাদন করে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়সহ রমজান মাসের বিশেষ
খতমে তারাবি নামাজ জামাতে পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। ধর্মপ্রাণ
মুসলমানরা পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, নফল ইবাদত, জিকর-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, দোয়া-ইস্তেগফার,
জাকাত প্রদান ও দান-সাদকা করে বিপদগ্রস্ত অসহায় মানুষকে
স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতে সচেষ্ট হন।
একনিষ্ঠভাবে তওবা করা : এ মুবারক মাসে প্রবেশ
করতে পারে এবং আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদতে মশগুল হতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্র
কাছে তওবা কর; যাতে করে সফলকাম হতে পার।”[২৪ আন-নূর : ৩১]
- اَللَّهُمَّ
اغْفِرْلِىْ :
আল্লাহুম্মাগফিরলি, হে আল্লাহ! আমাকে
ক্ষমা করে দিন।
“হে লোকেরা,আপনারা আল্লাহ্র কাছে তওবা করুন। আমি প্রতিদিন তাঁর কাছে ১০০ বার তওবা
করি।” [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম মুসলিম (২৭০২)]
তাই একজন মুসলিম তার রবের কাছে
বিনয়াবনতভাবে দোয়া করবে যেন আল্লাহ তাআলা তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ রেখে,আল্লাহ যেন তার আমলগুলো কবুল করে নেন। বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা ।
যে কাজগুলো রমজান মাসে একজন মুসলমানের
ইবাদত বন্দেগীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে সেগুলো দ্রুত সমাপ্ত করার চেষ্টা
করা।
রোজার মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা করা : এটা অবশ্যই
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, রমজানের
আগমনের আগেই রোজার মাসয়ালাগুলো জেনে নিতে হবে, পরিবারের
লোকদেরও তা শিক্ষা দিতে হবে।
হালাল জীবিকা : আল্লাহর দরবারে ইবাদত
কবুল হওয়ার একটি শর্ত হচ্ছে হালাল জীবিকা অন্বেষণ। রমজানের সেহরি ও ইফতারি- এ দুটি
কাজও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং আমাদের সেহরি এবং ইফতারি যেন কিছুতেই হারাম
উপার্জন থেকে না হয়। রমজান আসার আগেই হালাল রিজিক অন্বেষণে সচেষ্ট হতে হবে।
পাপ কাজ পরিত্যাগ : রমজান আসার আগেই
যাবতীয় পাপ কাজ পরিত্যাগ করতে হবে, যাতে রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষার্থে এ মাসে সব ধরনের পাপ কাজ থেকে দূরে
থাকার অভ্যাস তৈরি হয়। যাদের ধূমপানের অভ্যাস আছে, তাদের
দায়িত্ব রমজানের আগেই তা পরিত্যাগ করা। যারা অশ্নীল কাজে জড়িত হওয়া কিংবা অশ্নীল
ছবি-ভিডিও দেখায় অভ্যস্ত, তারা যেন রমজানের আগেই এসব কাজ
থেকে ফিরে আসে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করে নেয়। গিবত, পরনিন্দা,
হিংসা, বিদ্বেষ, চোগলখুরি,
অহঙ্কার ও কৃপণতার মতো গর্হিত কাজগুলো অবশ্যই পরিত্যাগ করার অভ্যাস
গড়ে তুলতে হবে।
এভাবে রমজানে সঠিকভাবে সিয়াম সাধনা
এবং রমজানের পবিত্রতা রক্ষার জন্য অবশ্যই আমাদের রমজানের আগেই নিজেদের মানসিক ও
শারীরিকভাবে তৈরি করে নিতে হবে।