ভুমিকা
পাইলস রোগের রহস্য কি ? আসলে আমাদের শরীরে
যত রকমের বিষ তৈরী হয় এবং যত রকমের বিষ বাইরে থেকে ঢুকে, তাদের শরীর থেকে বের করার
সবচেয়ে বড় মাধ্যম হলো পায়খানা। ঢাকা শহরের সমস্ত ড্রেন এবং সোয়ারেজ লাইনগুলি যদি সাতদিনের
জন্য বন্ধ করে দিলে যেমন সমস্ত শহরের পরিবেশ দূষিত-বিষাক্ত হয়ে অগণিত মারাত্মক মারাত্মক
রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে, তেমনি যে-সব মানুষের নিয়মিত পায়খানা হয় না তাদেরও ধীরে ধীরে
শরীর বিষাক্ত হয়ে (হৃদরোগ-কিডনীরোগ-স্নায়ুরোগ-ক্যানসার-ডায়াবেটিস ইত্যাদি) মারাত্মক
মারাত্মক রোগ পয়দা হতে থাকে।
অর্শ বা পাইলস রোগে অনেকে ভোগেন কিন্তু
বুজতে পারেন না। পাইলসের সমস্যা লুকিয়ে রাখা ঠিক নয় ।পাইলস বা অর্শ্বরোগ নিয়ে
আমাদের মাঝে লুকোচুরি খেলার প্রবণতা অনেক। কিছুটা ভয় ও বিব্রতকর অনুভূতির জন্য এ জাতীয়
রোগ হলে ডাক্তার দেখাতে চাই না। এ ক্ষেত্রে স্বচিকিৎসা আর হাতুড়ে চিকিৎসায় তুষ্ট থাকি
আমরা। বিভিন্ন কুসংস্কার এবং মলদ্বারের সব রোগই পাইলস এই ভ্রান্ত ধারণার কারণে চিকিৎসকের
কাছে যেতে দেরী করেন যা কখনও কখনও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে। হয় রোগটি শুরু থেকেই ক্যান্সার
অথবা অবহেলার কারণে ইতোমধ্যে সেখানে ক্যান্সার হয়ে গেছে।
সে জন্য অর্শ বা পাইলস নিয়ে জানার আগে
পায়খানার সাথে অন্যান্য প্রধান যে সকল অসুখের কারনে পায়খানার রাস্থায় জ্বালা পূড়া,
ব্যথা ও রক্ত যেতে পারে সেই সকল অসুখ নিয়ে অল্প কিছুটা জানার দরকার –নতুবা পাইলস হলে
মনে করবেন ফেস্টুলা আর ফেস্টুলা হলে মনে করবেন পাইলস রোগে ভুগিতেছেন ইত্যাদি
তীব্র বেদনা দায়ক এবং জটিল রোগগুলোর মধ্যে অর্শ বা পাইলস হলো একটি কিন্তু মলদ্বারে বা পায়ুপথ দিয়ে রক্ত আসলে বা ব্যথা করলেই যে অর্শ বা পাইলস হয়েছে তা মনে করা ঠিক নয় – যেসব রোগের কারনে টয়লেটে রক্ত যায় তার মধ্যে রয়েছে পাইলস, এনালফিশার, পলিপ, ক্যান্সার, ফিস্টুলা, আলসারেটিভ কোলাইটিস, রেকটাল প্রোলোপস ইত্যাদি এবং তার মধ্যে মাত্র ১৮ শতাংশ পাইলস, ২ শতাংশ থ্রমবোসড পাইলস, ৩৫ শতাংশ এনাল ফিশার, ২.২ শতাংশ পাইলস, ফিস্টুলা, এনাল ফিশার একত্রে, ১৫ শতাংশ ফিস্টুলা, ২.৫৫ শতাংশ পায়ুপথ ক্যান্সার, ৩.৫ শতাংশ রেকটাল পলিপ, ২ শতাংশ মলদ্বারে ফোঁড়া, ১.৮৪ শতাংশ অজানা কারণে মলদ্বারে ব্যথা, ৬ শতাংশ ক্রণিক আমাশয় (আইবিএস), ০.৫ শতাংশ অজানা কারণে রক্ত যাওয়া, ০.২৫ শতাংশ অজানা কারণে মলদ্বারে চুলকানি রোগে ভুগে থাকেন । ( রিসার্চ তথ্য – অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক )
পাইলস কেন হয়?
পাইলস কেন হয়? তার সঠিক কারণ জানা সম্ভব না হলেও দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া, পানি কম খাওয়া, শাকসব্জী ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার কম খেলে, অতিরিক্ত ওজন, গর্ভাবস্থায়, লিভার সিরোসিস, বৃদ্ধ বয়সে, বেশী চাপ দিয়ে মল ত্যাগ করলে, বেশি মাত্রায় মল নরমকারক ওষুধ ব্যবহার করলে, টয়লেটে বেশী সময় ব্যয় করলে, পরিবারে কারও পাইলস থাকলে, দীর্ঘ সময় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে ইত্যাদি নানান কারনে অর্শ বা পাইলস বেশি হয়ে থাকে।
অর্শ বা পাইলসের লক্ষন ও উপসর্গসমূহ কী ?
১. পায়খানা করার সময় অত্যধিক বা অল্প পরিমাণে রক্ত যেতে পারে।
২. গুহ্য দ্বারে জ্বালাপোড়া এবং ফুলে যায়।
৩. টাটানি ও যন্ত্রণা।
৪. কাঁটাবিদ্ধ অনুভূতি।
৫. মাথা ধরা ও মাথা ভার বোধ।
৬. উরুদেশ, বক্ষ, নাভির চারপাশে ব্যথা ও মলদ্বারে ভার বোধ।
৭. কোমর ধরা ও কোষ্ঠবদ্ধতা।
৯, মলদ্বারে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হতে পারে।
১০,মলদ্বারের বাইরে ফুলে যায় যা হাত দিয়ে স্পর্শ ও অনুভব করা যায়।
১১,পায়ুপথের মুখে চাকার মত হতে পারে।
১২,কিছু কিছু ক্ষেত্রে মলদ্বারে ব্যথা হতে পারে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
পায়খানা কালো বা লালচে হলে, পায়খানার সাথে রক্ত আসলে, পায়খানার সময় বা পরে পায়ুপথের মুখে চাকা অনুভব করলে, মলদ্বারে ব্যথা হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহন করতে হবে।
অর্শ বা পাইলস রোগে করণীয়
প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
অত্যাধিক পরিশ্রম করা যাবে না।
পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসব্জী ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য অর্থাৎ পায়খানা যেন কষা না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
নিয়মিত এবং নির্দিষ্ট অথবা কাছাকাছি সময়ে মলত্যাগ করতে হবে।
এমন খাবার গ্রহণ করতে হবে যা সহজে হজম হয়।
নিয়মিত ব্যায়াম করলে তা পায়খানার কষাভাব দূর করতে সাহায্য করবে।
অনেকসময় ধরে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা থাকা যাবে না।
প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
টয়লেটে অধিক সময় ব্যয় করা যাবে না।
শরীরের ওজন বেশি হলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
মল ত্যাগের সময় বেশি চাপ দেয়া যাবে না।
দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা থাকলে তার চিকিৎসা নিতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া লেকজেটিভ অধিক পরিমানে গ্রহণ করা যাবে না।
অর্শ বা পাইলস রোগের চিকিৎসা
অর্শ বা পাইলসের চিকিৎসা সাধারনত পর্যায়ের ওপর নির্ভর করে করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, পাইলসের চিকিৎসায় কোনও অস্ত্রোপচার লাগে না। বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাইলসের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। সাধারনভাবে চারটি পর্যায়ে পাইলসের চিকিৎসা করা হয়। প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনও অস্ত্রোপচার লাগে না কিন্তু তৃতীয় এবং চতুর্থ পর্যায়ে অস্ত্রোপচার লাগে। কারন- তৃতীয় এবং চতুর্থ পর্যায়ে জিনিসটি যেহেতু বের হয়ে আসে এটি অস্ত্রোপচার করেই সরাতে হয়। রোগী যদি দেরি না করে তাহলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচার ছাড়াই চিকিৎসা করা সম্ভব। পাইলসের আধুনিক চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই সম্ভব। নিম্নে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হলঃ
পাইলসের ওষুধ
পাইলসের রক্ত বন্ধের জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার হয়ে আসছে যেমন ট্রানেক্স ক্যাপসুল ১টি করে ২ বার ৫ দিন অথবা এনারক্সিল ১টি করে তিনবার ৫দিন। সর্বশেষ যে ওষুধটি বাজারে এসেছে তার নাম ফ্লাভোনয়িক এসিড। এটির কার্যকারিতা নিয়ে এখনও বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চলছে। প্রাথমিক পাইলসে এটি ভাল কাজ দেবে বলে আশা করা যায়। এটির রোগীদের প্রতি অনুরোধ দয়া করে কোনও চিকিৎসাই নিজে নিজে করবেন না।
মলদ্বারের বাইরের অর্শ যা হাত দিয়ে অনুভব করা যায় কিন্তু ব্যথা বা রক্তপাত হয় না সেক্ষেত্রে,
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী
Normanal/Hemorif/Daflon অথবা Diohes
(Diosmin 450mg ও Heperidin
50mg এর কম্বিনেশনে তৈরি ট্যাবলেট) খেতে হবে।
মলদ্বারে ব্যবহৃত ওষুধ
পাইলসের সমস্যা এত বেশি যে বেশিরভাগ রোগীই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ বা মলম লাগিয়ে থাকেন। এমনকি বাসার জন্য কারো কোনো কারণে একটি অয়েন্টমেন্ট দেয়া হয়েছিল সেটিই নিজে নিজে লাগাতে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের অয়েন্টমেন্ট ক্রীম, সাপোজিটরী, জেল বাজারে পাওয়া যায়। এসব ওষুদের ভেতর বিভিন্ন ধরনের ওষুদের সংমিশ্রণ থাকে যেমন অবশকারী ওষুদ, স্টেরয়েড ও এন্টিসেপ্টিক। এসব ওষুদের ভেতর অবশকারী ওষুধটি ব্যথা ও চুলকানি কমাতে পারে কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে চামড়ায় এলার্জি হতে পারে। লোকাল এনেন্থেটিক ও স্টেরয়েড ওষুদের সংমিশ্রণ মলদ্বারের কষ্ট কমাতে কোনো বাড়তি ভূমিকা রাখে না। আমাদের দেশে যে সমস্ত অয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায় যেমন ইরিয়ান, এনুস্ট্যাট, নুপারকেইনাল ও হেডেনসা এবং রিলিচ রেকটাল অয়েন্টমেন্ট। এগুলো মলদ্বারের সামান্য ভেতরে দিনে ২-৩ বার লাগাতে হয় ৭-১৪ দিন।
অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুল হক
বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ বিশেষজ্ঞ, চেম্বার : জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল
অর্শ্ব বা পাইলসের হেমিওপ্যাথিতে কোন চিকিৎসা আছে কি?
পাইলস বা অর্শ্বে হোমিওপ্যাথিক ঔষধের কার্যকারিতা বহু প্রাচীনকাল থেকেই সন্দেহাতীতভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে প্রমাণিত হয়ে আসছে।
* পাইলসের চিকিৎসায় প্রথম কথা হলো যদি কোষ্টকাঠিন্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন অর্থাৎ পায়খানা নরম রাখতে পারেন, তবে ৯৯% পাইলস বিনা ঔষধেই সেরে যাবে। আর কোষ্টকাঠিন্য চিরতরে নির্মূল করার জন্য কোষ্টকাঠিন্য অধ্যায়ে অালোচিত ঔষধগুলি প্রয়োগ করবেন।
* অনেক হোমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানী পাইলসের রোগীদেরকে সকালে Sulphur এবং সন্ধ্যায় Nux vomica ঔষধ দুইটি খেতে দিতেন। সাধারণত ৩০ শক্তিতে কয়েক মাস খেলে অধিকাংশ পাইলস ভালো হয়ে যায়। অন্য কোন ঔষধের প্রয়োজন হয় না। এই ঔষধ দুটি সরাসরি পাইলস নিরাময় করে না বরং কোষ্টকাঠিন্য সারানোর মাধ্যমে এরা পাইলস নির্মূল করে থাকে। এমনকি কোন কোন চিকিৎসাবিজ্ঞানী এমনও বলেছেন যে, সালফার, নাক্স ভমিকা এবং থুজা মাত্র এই তিনটি ঔষধ দিয়ে পৃথিবীর এমন কোন রোগ নাই যা সারানো যায় না (সুবহানাল্লাহ !)।
আর এই তিনটি ঔষধই মোটামুটি কোষ্টকাঠিন্যের শ্রেষ্ট ঔষধ।
* যাদের কোষ্টকাঠিন্য খুবই জটিল, সারতেই চায় না, তারা অবশ্যই কোষ্টকাঠিন্য অধ্যায়ে বর্ণিত ঔষধগুলো লক্ষণ অনুযায়ী প্রয়োগ করবেন।
Calendula officinal is : পায়খানার রাস্তা যদি মাত্রাতিরিক্ত ফোলে যায়, ইনফেকশান হয়ে যায়, ঘায়ের মতো হয়ে যায়, ব্যথায় টনটন করতে থাকে, তবে ক্যালেন্ডুলা ঔষধটি নিম্নশক্তিতে (মাদার টিংচার) কিছু পানির সাথে মিশিয়ে তাতে তুলা ভিজিয়ে সেখানে দু’চার ঘন্টা পরপর প্রয়োগ করুন। দু’চার ঘণ্টা পরপর বা অথবা আরো ঘনঘন প্রয়োগ করুন। যত মারাত্মক ইনফেকশান বা ফোলা-ব্যথা-আলসার হোক না কেন, দেখবেন দুয়েক দিনের মধ্যে সব চলে গেছে। এলোপ্যাথিতে যেমন ডেটল, স্যাভলন, হেক্সিসল ইত্যাদি আছে, তেমনি হোমিওপ্যাথিতে আছে ক্যালেন্ডুলা। তবে ক্যালেন্ডুলার ক্ষমতা তুলনাবিহীন। আক্রান্ত স্থানে লাগানোর পাশাপাশি দশ / বিশ ফোটা করে খেতেও পারেন। অথবা লক্ষণ মতে অন্য কোন ঔষধ খান। পাশাপাশি যে-কোন ধরনের কাটা-ছেড়া-ঘা-ইনফেকশানে ক্যালেন্ডুলার সাহায্য নিতে ভুলবেন না।
* পাইলস থেকে উজ্জল লাল রঙের রক্তপাত হলে Millefolium ঔষধটিদশ/বিশ মিনিট পরপর খেতে থাকুন যতক্ষণ না রক্তপাত বন্ধ হয়। অন্যদিকে কালো / কালচে রক্তপাত হলে Hamamelis Virginica ঔষধটি দশ/বিশ মিনিট পরপর খেতে থাকুন। পায়খানার রাস্তা থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে শরীর দুরবল হয়ে পড়লে, রক্তশূণ্যতা দেখা দিলে China officinalis অথবা Acidum Phosphoricum ঔষধটি খান। পাশাপাশি ভিটামিন জাতীয় অন্যান্য ঔষধগুলিও খেতে পারেন।
Aesculus Hippocastanum : এসকিউলাসকে বলা যায় সবচেয়ে সেরা পাইলসের ঔষধ। এই ঔষধের কাজের মূল কেন্দ্র হইল তলপেটের যন্ত্রপাতি। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো কোষ্টকাঠিন্য (পায়খানার সাইজ বড় বড় এবং শক্ত), রক্তক্ষরণযুক্ত অথবা রক্তক্ষরণবিহীন পাইলস, পায়খানার রাস্তায় কেহ আলপিন দিয়ে খোচা মারছে এমন ব্যথা, পায়খানার রাস্তা শুকনা শুকনা লাগা, তলপেটে দুরবলতা, পায়ে অবশ অবশ ভাব, হাটঁলে রোগের মাত্রা বেড়ে যায়, রোগী খুবই বদমেজাজি ইত্যাদি। ঔষধ নিম্নশক্তিতে খেলে রোজ দুই/তিন বার করে খাবেন আর উচ্চ শক্তিতে খেলে দশ/পনের/বিশ দিন পরপর এক মাত্রা করে।
Collin Sonia Canadensis : ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ পেট এবং পায়খানার রাস্তার অসুখের সাথে মাথাব্যথা, নাভী এবং তলপেটে ব্যথা, কোষ্টকাঠিন্য, কোথানি, অবসন্নতা, আম ও রক্তযুক্ত পায়খানা, মাসিকের সময় পাইলস, পায়খানার রাস্তার মাংস বেরিয়ে পড়া (Prolapse of the rectum), রোগের লক্ষণ শরীরের ওপর থেকে নীচের দিকে যায়, হার্টের সমস্যা এবং পাইলসের রক্তক্ষরণ ঘুরেফিরে আসে, বিভিন্ন জয়েন্টের বাতের ব্যথা, বুকে ব্যথা ইত্যাদি ইত্যাদি।
Aloe socotrina : এলু সকোট্রিনার প্রধান প্রধান লক্ষণ কোষ্টকাঠিন্য, পেট, তলপেট এবং মাথায় রক্তসঞ্চয়, অদল-বদল করে মাথাব্যথা এবং কোমরের বাত, শীতকালে পাইলসের উৎপাত বৃদ্ধি পায়, দুরবলতা, খাওয়ার পরপরই পায়খানার বেগ হওয়া, শক্ত পায়খানা (ঘুমের মধ্যে) নিজের অজান্তেই বিছানায় পড়ে থাকে, পাইলেসের চেহারা দেখতে আঙুরের থোকার মতো, সারাক্ষণ নীচের দিকে ঠেলামারা ব্যথা, রক্তক্ষরণ, টনটনে ব্যথা, স্পর্শ করা যায় না, গরম, ঠান্ডা পানিতে আরাম লাগে ইত্যাদি ইত্যাদি।
Peoniaofficinalis : পিওনিয়ার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো পায়খানার রাস্তায় জ্বালাপোড়া, চুলকানি, ফোলে যাওয়া, (বিছানা-জুতার) চাপ থেকে ঘা হওয়া, পায়খানার রাস্তার ফোড়া, ফেটে যাওয়া(fissure), ভগন্দর (fistula), রক্তনালী ফোলে যাওয়া (varicose veins), ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখা (nightmare), নড়াচড়া-হাঁটা-স্পর্শে রোগের কষ্ট বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
Nitricum acidum : নাইট্রিক এসিডের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো কোষ্টকাঠিন্য, (শক্ত হউক বা নরম) পায়খানার পরে ব্যথা, মেজ (wart), প্রস্রাবের গন্ধ গরুর প্রস্রাবের মতো (খুবই কড়া), আবহাওয়া পরিবর্তন হলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে, শরীরের ছিদ্রযুক্ত স্থানের ক্ষত, খিটখিটে মেজাজ, ঘনঘন ডায়েরিয়ায় ভোগে, চোখের নালী ক্ষত, রাতের বেলা হাড়ের ব্যথা, হাড়ের ক্ষত, যে-কোন ঘা/ক্ষত সহজে সারতে চায় না, শরীরে পানির পরিমাণ বেশী ইত্যাদি ইত্যাদি।
Muriaticum acidum : মিউরিয়েটিক এসিডের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো কান্ডজ্ঞান লোপকারী মাথাব্যথা, চোখে অন্ধকার এবং উল্টাপাল্টা দেখা, অনিচ্ছাকৃতভাবে পায়খানা-প্রস্রাব বেরিয়ে যাওয়া, প্যারালাইসিস, পাইলসে বা পায়খানার রাস্তায় জ্বালাপোড়া, মাঝারি বা মারাত্মক ধরনের ইনফেকশান, পূজঁ-নিঃশ্বাস-শরীরের গন্ধ সবই দূর্গন্ধযুক্ত, পাইলস দেখতে আঙুরের থোকার মতো, পিঙল বর্ণের, স্পর্শ করলে জ্বালা করে, কোথানি দিলে আলিশ বেরিয়ে যায়, জিহ্বায় ইনফেকশান, কানপচাঁ ইত্যাদি ইত্যাদি।
Sepia officinalis : সিপিয়ার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো পেশা এবং পরিবারের লোকজনদের প্রতিও উদাসীনতা, রোগের গতি শরীরের নীচে থেকে উপরের দিকে, রোগী সবর্দা শীতে কাঁপতে থাকে, পেটের ভিতরে চাকার মতো কিছু একটা নড়াচড়া করছে মনে হওয়া, পাইলস, পায়খানার রাস্তা বা জরায়ু ঝুলে পড়া (prolapse), খাওয়া-দাওয়া ভালো লাগে না, পায়খানার রাস্তা ভারী মনে হয়, শিশুরা ঘুমানোর সাথে সাথেই বিছানায় প্রস্রাব করে দেয়, মুখের মেছতা (Chloasma), পুরুষাঙ্গের মাথার চারদিকে গোটা (condylomata), ঘনঘন গর্ভপাত (abortion), যৌনাঙ্গে এবং পায়খানার রাস্তায় ভীষণ চুলকানি, দীর্ঘদিনের পুরনো সর্দি, অল্পতেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে, দুধ হজম করতে পারে না, স্বভাবে কৃপন-লোভী, একলা থাকতে ভয় পায় ইত্যাদি ইত্যাদি।
সূত্র: আধুনিক হোমিওপ্যাথি